ভালোবাসার সিলেট

মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, পিপিএম  : | প্রকাশ: ২০ মার্চ, ২০২৩, ০২:৪৫ এএম

 
বিশ সালের উনিশ তারিখ সিলেটের মাটিতে এসে
যোগদান করে শুরু করি কাজ তাকে ভালোবেসে। 
 
তখন ছিল চারিদিকে শুধু করোনাকে নিয়ে ভয়
মনে মনে ভাবি কী করে করবো তাকে জয়। 
 
মাস্ক-স্যানিটাইজার-হ্যান্ড গ্লাভস কত-না আয়োজন
এত কিছুর পরেও করোনা করেছে আক্রমণ। 
 
করোনায় মৃত লাশকে নিতে চায়নি আত্মীয় কেহ
পুলিশ গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সৎকার করেছে মৃতদেহ। 
 
লকডাউনে অচল দেশ, অচল বিশ্ববাসী
খাবার পাওয়া মানুষের মাঝে দেখেছি অনেক হাসি। 
 
টিকাদানে সরকারসহ ছিল অনেকের অবদান
কয়েক ডোজ টিকা তাই করোনাকে করেছে ম্লান।
 
 
বিশ সালে দেখেছি বন্যা, দেখেছি বাইশ সালে
অতবড়ো বন্যা দেখেনি সিলেট শত বছরের কালে। 
 
সরকারপ্রধান সিলেটে এলেন মানবতার টানে।
ত্রাণসামগ্রী পেয়ে মানুষ বেঁচে গেল প্রাণে । 
 
সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি ত্রাণ নিয়ে
সকলে মিলে পৌঁছে দিয়েছি মানুষের কাছে গিয়ে। 
 
৩৬০ আউলিয়ার দেশ, পবিত্র মাটির বুকে
সকল ধর্মের সম্প্রীতিতে মানুষ ছিল সুখে। 
 
দেখেছি সুরমা, দেখেছি কুশিয়ারা, দেখেছি শত নদী
মনঃপ্রাণ দিয়ে দেখতে আমি আবার আসিতাম যদি। 
 
মাধবপুর থেকে শুরু করে গিয়েছি ধর্মপাশা
সকল থানা ভ্রমণে আমার মিটেছে মনের আশা । 
 
সিলেট থেকে যাত্রা করে ছুটে যাই মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ আর সুনামগঞ্জে গিয়েছি বারবার। 
 
বিছানাকান্দি, সাদাপাথর ও জাফলং যাওয়ার ফলে
সাঁতার কেটেছি অনেক বার পাথরছোঁয়া জলে । 
 
রাতারগুলে জল-ছোঁয়া গাছের সৌন্দর্য দেখেছিলাম
যাবার কালে অনেক কিছুই স্মৃতিতে মেখে নিলাম । 
 
বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওড় আর হাকালুকি হাওড়ে গিয়ে
ঢেউয়ের তালে বোট চলেছে কঠিন ঝুঁকি নিয়ে। 
 
জুড়ী, শায়েস্তাগঞ্জ, বিশ্বম্বরপুর থানায় বারবার যাওয়ার ফলে,
সুন্দর থানাভবনের কথা সবাই এখন বলে। 
 
লালাবাজারের আরআরএফ-এ যতই গিয়েছি আমি
দিনে দিনে ভবনগুলো হয়েছে ঊর্ধ্বগামী। 
 
সিলেট পুলিশ হাসপাতালের কথা না-বললেই নয় বারবার না গেলে কি অত সুন্দর হয়? 
 
দূরের হলেও শাল্লা থানায় বারবার আমি গিয়ে 
সুন্দর ভবন দেখে আমি ফিরেছি শান্তি নিয়ে।
 
 
মৌলভীবাজারের পুলিশ ক্লাব দ্রুত কীভাবে হলো?
সবাই মিলে আজকে আমায় সাফল্যের কথা বলো। 
 
মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করতে যতই গিয়েছি আমি
সবাই জানেন উন্নতি হয়েছে, জানেন অন্তর্যামী। 
 
আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে মোর ছিল অনেক দান
লক্ষ্য ছিল সকল মানুষ শান্তি যেন পান। 
 
সিলেট তোমায় বিদায় দিলাম, আসব কি ফিরে আর?
মনকে আমি বলেছি তাই ফিরে এসো বারবার। 
 
সিলেটে আমার কর্মজীবনের দীর্ঘ তেত্রিশ মাসে
বিদায় বেলায় অনেক স্মৃতিই আজ যে মনে ভাসে। 
 
চা-বাগানে এসেই দেখি দুটি পাতা একটি কুঁড়ি
ঘাম ঝড়িয়ে শ্রমিকদল ভরছে পিছের ঝুড়ি। 
 
যেখানে গিয়েছি অসংখ্য মানুষের পেয়েছি ভালোবাসা
পূরণ হয়েছে আজকে আমার বহু দিনের আশা। 
 
যেখানে যাই সবুজ দেখি, সবুজের শেষ নাই।
চির সবুজের সিলেট দেখে আমি যে মজা পাই। 
 
অনেক পথ ঘুরেছি আমি, দেখেছি কত পাহাড়
দেখেছি আমি শত শত চা বাগানের বাহার। 
 
আমার দুয়ার খোলা ছিল ধনী-দরিদ্রের জন্য
সকলের সেবা দিতে পেরে হয়েছি আমি ধন্য। 
 
বর্ষাকালে বৃষ্টির ধারা থামতে নাহি চায়। 
গাছের ওপর বৃষ্টি পড়া দেখতে ছুটে আয়। 
 
অফিস-বাসায় কাজ করেছি, করেছি অনেক সাজ
বসন্তেরই ফুলগুলো কি বিদায় দেবে আজ? 
 
আলোচনায় বসেছি আমি শত শত স্থানে গিয়ে
বলেছি কথা, শিখেছি অনেক, তাই তো মনঃপ্রাণ দিয়ে। 
 
ভালোবাসার মানুষগুলো আজকে উপস্থিত হওয়ায়
ধন্য হলো হৃদয় আমার স্মৃতির কথা কওয়ায়।
 
 
ঊর্ধ্ব অফিসের নির্দেশনা অনেক পেয়েছিলাম বাস্তবায়ন করে মানুষের যে সেবা দিয়েছিলাম। 
 
আমার দপ্তরের শত শত নির্দেশনা নিয়ে
অনুজ অফিস কাজ করেছে মানুষের কাছে গিয়ে। 
 
সহকর্মীদের কাজ-কর্মে মুগ্ধ ছিলাম আমি
তাদের সহযোগিতা করেছে মোরে অনেক অগ্রগামী। 
 
বিভিন্ন দপ্তরের বেশি বেশি সহযোগিতার ফলে
অনেক কাজ করেছি আমি, সে কথা সবাই বলে। 
 
প্রতিদিনই প্রবাসীদের সমস্যার ফোন পেয়ে 
সেবার হাত যে বাড়িয়ে দিয়েছি, দেখেছে সবাই চেয়ে। 
 
মৌলভীবাজার শহরটাকে আধুনিক করতে গিয়ে অনেক পরিকল্পনা করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে। 
 
বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, অনেক কাজ করায় 
সফল হয়েছি আমি যে, উন্নত সমাজ গড়ায়। 
 
সিলেট শহরকে ভালোবেসেছি, যেথায় ছিল বাস 
সেবা পেয়েছি অনেকভাবে, মিটিয়ে মনের আশ । 
 
আম্বরখানা পার হয়ে, চা-পাহাড়ের মাঝ দিয়ে পৌঁছে গেছি বিমানবন্দর, ঢাকা যাওয়ার নিয়ত নিয়ে। 
 
অনেকগুলো প্রকাশনার বহুল পাতা ভরে 
সৃজনশীল কাজগুলোকে রাখা হয়েছে ধরে। 
 
নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিগুলো স্বচ্ছতার সাথে করায় অনেক অনেক ভূমিকা ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ায়। 
 
বিভাগীয় কশিনার ও ডিআইজি'র বাসায় পূর্ব দিকের লেকে,
সকালবেলা ঘুম ভেঙেছে শীতের পাখি দেখে। 
 
সিলেটে আমার দীর্ঘদিনে অনেক কাজ করায় 
এগিয়ে গেল পুলিশ বিভাগ স্মার্ট দেশ গড়ায়। 
 
ভালো কাজের উদ্বোধনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়গণকে পেয়ে,
অনেক অনেক সফলতার খবর দেখেছে মানুষ চেয়ে। 
 
সিলেটের মাটিতে জন্ম নিয়েছে অনেক অনেক কৃতীসন্তান,
মাতৃভূমির উন্নয়নে তাদের আছে অনেক অবদান। 
 
আইজিপি এখন মামুন স্যার, যিনি বৃহত্তর সিলেটের কৃতীসন্তান,
উজ্জ্বল হয়েছে পুলিশ বিভাগ, বেড়েছে সিলেটের সম্মান। 
 
লেখক: ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW