দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যতার মধ্যে ওষুধ উৎপাদনের অবস্থা খুব উজ্জ্বল বলে দাবি করা যাবে না। ৯৩% ফার্মেসিতেই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ! তাহলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মান কতটুকু ভাবা যায়। একজন অসুস্থ মানুষ বেঁচে থাকার ও আরোগ্য লাভের আশায়ই ওষুধ সেবন করেন। আর সেই ওষুধ যদি হয় ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে দেশে এখন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরিতে কিছু কোম্পানি সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তবে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ডলার সংকটে এই খাতেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশে ওষুধের জোগানের ৯০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। বাকি যেটুকু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সেগুলো প্রধানত ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও স্নায়বিকসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। জটিল পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন রক্ষায় ব্যবহূত এসব ওষুধের আমদানিতেও এখন বিরূপ প্রভাব ফেলছে ডলার সংকট। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) অতিপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধের আমদানি কমেছে ৯১ শতাংশ। ওষুধের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে কাঁচামাল আমদানি। একই সঙ্গে কমেছে ওষুধ শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও।
আমদানীকৃত ওষুধ ও উপকরণের অভাবে এখন জটিল অস্ত্রোপচারও হ্রাস পেয়েছে, আমদানিকৃত ওষুধের মধ্যে ইনসুলিনসহ কিছু সংখ্যক ওষুধ বাংলাদেশে তৈরি হয়। কিন্তু বিদেশি ওষুধে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়। কিছু দিনের মধ্যে এসব জীবনরক্ষাকারী ওষুধ আমদানি করতে না পারলে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। অপরদিকে দেশে নিষিদ্ধ যেসব ওষুধ তা অনেক ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে থাকেন। এসব নিষিদ্ধ ওষুধে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাই পথে বা ল্যাগেজের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করছে। এই ওষুধ রাখার কারণে ওষুধ বিক্রেতারা জেল-জরিমানার শিকারও হন। বাজারে এখন আমদানীকৃত যেসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোরও দাম অনেক বেড়েছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি জটিল অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে পেট্রোকেমিক্যালের দামের ঊর্ধ্বগতি। এ ছাড়া তুরস্কের বর্তমান অবস্থাও খারাপ। সর্বোপরি বৈশ্বিক অবস্থা ভালো না। যার ফলে ওষুধ আমদানিও কমেছে। ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাচ্ছে না। যেমন গাড়ির জন্য এলসি খুললে ব্যাংকের লাভ রয়েছে। ওষুধের জন্য খুললে লাভ তাদের কম বিধায় তারাও আগ্রহ দেখায় না। ওষুধ উৎপাদনে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সংকটের মধ্যে অসাধু সুযোগসন্ধানীরা বাড়তি মুনাফার লোভে তৎপর হয়ে উঠছে। এ সংকটে কিডনি, ক্যান্সারসহ অনেক জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার এমনও তথ্য রয়েছে, দেশে নিষিদ্ধ যেসব ওষুধ তা অনেক ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে থাকেন। এসব নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাই পথে বা লাগেজের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করছে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, জনস্বাস্থ্যে তা অবিলম্বের সুরহা করতে হবে। আর যারা সংকটকে পুঁজি করে পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তোলে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরি ওষুধ উৎপাদন ও আমদানি সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে ওষুধের সংকট তীব্রতরই হবে।