প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা,
সেকেন্ডারিতে যারা কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করেছো এবং যারা আকাক্সিক্ষত সফলতা লাভ করতে পারোনি-তোমাদেরকে অভিনন্দন। সর্বোচ্চ ফলাফল যারা অর্জন করেছো, তাদেররকে আবারও অভিনন্দন, তোমরা তোমাদের জীবনকে কঠিন করে ফেলেছো। যাদের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি তাদেরকেও অভিনন্দন, তোমাদের ওপর থেকে সমাজ-সংসারের অনেক অসুস্থ প্রত্যাশা কমে গেছে। এবার জীবনকে কিছুটা উপভোগ করতে পারবে। যারা অকৃতকার্য হয়েছো তাদেরকে মনের গহীন থেকে অভিনন্দন কেননা জীবন উপভোগে, বৈধ অর্থ কামাইয়ে এবং সুখের প্রাপ্তিতে তোমাদের সাথে পাল্লা দেওয়ার মত কেউ অবশিষ্ট রইলো না। তোমরা কাজী নজরুল ইসলামের মতে বিদ্রোহী হও, প্রেমিকও হও। হতাশ না হয়ে একবার শুন্যে তাকাও। তোমাকে সাজিয়ে দেয়ার জন্য সব আয়োজন শেষের পথে। এ+ প্রাপ্তির চেয়েও মানুষ হওয়াটা বড্ড বেশি দরকারি। সে চেষ্টায় পিছিয়ে থেকো না।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ,
আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, আপনাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সুনাম কুড়িয়েছে। তাদের সাফল্যে আপনারা সেতুর ভূমিকায় ছিলেন। তবে কিছুটা কষ্ট পাই, যখন এ+ পাওয়ার শিক্ষার্থীদেরকে সংখ্যা/নামে আপনারা যতোখানি হাইলাইট করছেন, তেমনিভাবে আপনার ক্লাসের কম ফলাফলধারীর দায় নিচ্ছেন না। যদি ভেবে থাকেন, কেউ একজন তাঁর মেধার কারণে এগিয়ে গেছে এবং অন্যজন সেভাবে পারেনি তবে সেখানে আপনার কৃতিত্ব কই? শ্রেণিকক্ষের সবাই আপনার হোক। যে ফেল করেছে কিংবা আশানুরূপ ফলাফল লাভ করতে পারেনি, তাদের পাশে আরও বেশি সাহস নিয়ে দাঁড়ান। ক্লাসে কী একবারও বলেছেন, এতা এ+ লইয়া রাষ্ট্র করবে কী? রাষ্ট্রের আরও বেশি মানুষ দরকার। তোমরা মানুষ হতে চেষ্টা করো। ভালো ফলাফল অর্জনকারীদের হৃদয়ে শিক্ষকদের প্রভাব যতোটুকু থাকে তার চেয়ে ঢের বেশি পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদেরকে হৃদয়ে লালন করে।
সম্মানিত অভিভাবক,
আপনাদের সন্তানদের ভালো ফলাফল অর্জিত হয়েছে কেবল আপনারা সচেতন ছিলেন বলেই। যাদের ছেলেমেয়েরা আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা নিজ সন্তানদের সাথে অন্য কাউকে কেন তুলনা করছেন? বৃদ্ধ বয়সে অতি শিক্ষিত ছেলেমেয়ে আপনাদের ভুলে যাওয়ার চেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় আপনাদের সাথে কাটানোর বোধ অর্জন করুক-এই প্রত্যাশায় যেটুকু সাফল্য দরকার সেটুকুর জন্য প্রার্থণা করেন। যে ছেলেটা আজ এ+ পায়নি কিংবা কৃতকার্যই হয়নি সে আপনার মুখকে চাঁদের চেয়েও উজ্জ্বল করে দেয়ার কোন এক সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেসবে নার্সিং করুন। আপনি সততায় থাকলে আপনার খারাপ ফলাফলকারী সন্তানও এই রাষ্ট্রের প্রভূত উপকার-উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সন্তানকে মানুষ হতে উৎসাহিত করুন; শিক্ষিত পশু নয়।
সংসার-সমাজ-রাষ্ট্র!
আপনাদের প্রতিষ্ঠিত নীতিতে আপনারা সর্বদাই ঠিক ছিলেন-এমন দাবী যুগান্তরের। পরবর্তী যুগ যখন সেখানে সজোরে লাথি মেরে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে তখন নির্ভুল নীতিতেও যে গলদ থাকে তা কিছুটা বুঝতে পেরেছেন হয়তো। গোল্ডেন এ+/এ+ অর্জনের জন্য আপনারা কারখানা খুলেছেন কিন্তু সেখানে কীসব উৎপাদিত হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে বোধহয় যুগব্যাপী সময় লাগবে! ইতোমধ্যে কিছুটা টের পাওয়ার কথা! সার্টিফিকেটের পুরুত্বের চেয়েও মানুষ গড়ার ক্যাম্পেইন যে বেশি বেশি দরকার সেটা উপলব্ধি করতে শিক্ষুন। কত সহস্র এ+ ঝরে গেছে সন্ধ্যা নামার আগেই অথচ একটা মানুষও ঝরে যায়নি মনুষ্যত্বের বৃন্ত থেকে। অসাধু উপায়, শিক্ষকের অনৈতিক সহায়তায়, কেবল মুখস্ত বিদ্যায়, অভিভাবকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রাশ রাশ এ+ প্লাস পাওয়ার চেয়ে সততার সাথে ফেল করা অনেক বেশি গৌরবের। এই সত্যের উপলব্ধি বোধ যবে জাগ্রত হবে তবেই আমরা জাঁতি হিসেবে ম্যাচউর হবো। কেবল এ প্লাসেরর আধিক্য মানবিকতা, সহনশীলতা এবং সহমর্মীপূর্ণ সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে প্রস্তুত করতে পারবে না বরং আরও অনেকগুলো উপাদান প্রয়োজন-যা এখনো আমাদের ভাবনায় পাখা মেলার সুযোগ পায়নি। (রাজু আহমেদ : কলাম লেখক)