শুভ জন্মাষ্টমী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সর্বত্র

সজিব মিস্ত্রী : | প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৩:৪৬ এএম : | আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৩:৪৭ এএম

শুভ জন্মাষ্টমী সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের-শুভ জন্মাষ্টমী ছিলো বুধবার। দ্বাপরযুগে আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়-নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় তখন সেই অশুভ শক্তির বিনাশ করে কল্যাণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অবতার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। 
কৃষ্ণের জন্মকাহিনী, জীবন নিয়ে উৎসাহের অবকাশ নেই। হিন্দু পুরাণের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র কৃষ্ণ। মহাভারত, ভাগবত, গীতা, বৈষ্ণব পদাবলী জুড়ে যার বিচরণ। সেই ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন পালনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। 
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের মহাপুণ্য তিথিতে বেদকী ও বাসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে অত্যাচারী কংসের কারাকক্ষে পুত্ররূপে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতনীদের বিশ্বাস, কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। দুষ্টের দমন করে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি মানুষরূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। 
জন্মাষ্টমী উপবাস, পূজা-অর্চনা ও নাম-কীর্তনসহ বিভিন্ন আচার-উপাঁচার পালন করেন হিন্দু সম্প্রদায় লোকেরা। এ ছাড়া ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে যথাযোগ্য আনুষ্ঠাকতায় দিবসটি পালন করা হবে। 
শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় আছে- ‘যে যথা মাং প্রপ্যদান্তে তাংস্তথৈব ভজিম্যহম। মম বর্তানুবর্তে মনুষ্য পার্থ সর্বশ : (গীতা ৪/১১)।’ অর্থাৎ যে ভক্ত আমাকে যেভাবে ভজনা করে আমি তাকে সেভাবে পুরস্কৃত করি।
শাস্ত্রে আছে, কেউ যদি একবার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করেন, তা হলে তাকে আঁর এই ঝড় জগতে জন্ম, মৃত্যু, কষ্ট ভোগ করতে হয় না ও পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে পারে। বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লোকশিক্ষার জন্য অর্জুনের মাধ্যমে মূলত মানবসমাজকে শিক্ষা দিয়েছেন। জীব হিসেবে আমরা অণুচেতনার অধিকারী হলেও কলুষিত পরিবেশে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, ভোগ বিলাস, জাগতিক মোহ, যশ আর খ্যাতি ও অর্থবিত্তের লোভে মায়াচ্ছন্ন হয়ে আমরা ভুলে যাই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমাদের করনীয় বিষয়গুলো। 
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-যথা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতী ভারত/ অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানাং সৃজাম্যহম /পবিত্রানায সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম/ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে। অর্থাৎ পৃথিবী যে যখন ধর্মের গ্লানি ও অধর্ম বেছে যায় ভগবান তখন পৃথিবীতে আসেন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম সংস্থাপনের লক্ষ্যে। 
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীকে কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী এবং শ্রী জয়ন্তীও বলা হয়।
জন্মাষ্টমীতে আনন্দ শোভাযাত্রার ঐতিহ্য আছে ঢাকার। ১৯৫৫ সালে রাধাষ্টমীর সময় পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় পিরু মুন্সীর পুকুরপাড় থেকে জন্মাষ্টমীর একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হতো। পরবর্তীতে নববাপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির থেকে কৃষ্ণদাসের নেতৃত্বেও আরও সুদৃশ্য শোভাযাত্রা বের হতো। মিছিলে অনেকেই গোপ ও ব্রজবাসী সেজে র‌্যালীতে যোগ দিতেন। মহামারি করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে এবার দেশব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপন করা হবে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। হিন্দু সম্প্রদায় উপবাস, অর্চনা ও কৃষ্ণ নামকীর্তনসহ বিভিন্ন আচার-উপাঁচারের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
৬ সেপ্টেম্বর, দুপুর ৩টা ২৭ মিনিট থেকে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি শেষ হয় :  ৭ সেপ্টেম্বর, বিকাল ৪ টা ৪৪ মিনিটে রোহিণী নক্ষত্র : ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শেষ হয়। জন্মাষ্টমীর শুভতিথি ছিলো।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW