বগুড়া শহরে পুলিশের টানা মাদক বিরোধী অভিযানে চিহ্নিত মাদক স্পটগুলো প্রায় বন্ধ বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়ীরা নয়া কৌশল অবলম্বন করে চালাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে পুলিশ প্রশাসনের আনাগোনা কম। মাদক ব্যবসার নতুন কৌশলের কারণে শহর এলাকায় চেয়ে শহরের বাইরের গ্রামগঞ্জে মাদক মিলছে সহজেই। মাদকসেবীরা তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ছুটছে এইসব প্রত্যন্ত এলাকায়। ঝামেলাহীন ভাবে মাদক ক্রয় করে সেবন করছে।
সরেজমিনে বগুড়া শহরের মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত চকসুত্রাপুর, রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন হরিজন বস্তি ও হাড্ডিপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো মাদক বিক্রি করা হচ্ছে তবে সেটা তুলনামূলক অনেক কম। স্থানীয় এক মাদক সেবনকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানায়, পুলিশের ঘন ঘন অভিযানের কারণে এইসব এলাকায় মাদক ব্যবসা অনেক কমে গেছে, তবে অপরিচিত ক্রেতার কাছে এখান থেকে মাদক বিক্রি করা হয় না। যারা পূর্বপরিচিত শুধু তারাই এখান থেকে মাদক কিনতে পারেন। আগের মত সহজেই মাদকের ব্যবস্থা করা যায় না। তবে শহরের বাইরে ব্যবসা রমরমা।
অভিযোগ আছে, বগুড়া জেলার গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন মাদকের অভয়ারণ্য পরিনত হয়েছে। গাবতলী উপজেলার গাবতলী পৌর এলাকা, কাগইল, দক্ষিনপাড়া, দুর্গাহাটা, মহিষাবান, বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন। অপরদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকা, ভেলাবাড়ী, চালুয়াবাড়ী, হাটশেরপুর, কাজলা, নারচী, ফুলবাড়ী, কর্ণিবাড়ী, কুতুবপুর,কামালপুর, বোহাইল ইউনিয়নের অনেকেই মাদক বেচাকেনা করে এখন বিত্তশালী, অনেকেই পেশা বদল করে ঝুঁকছে মরন নেশা মাদকের দিকে। এদের মধ্যে অনেকেই রাতারাতি বনে গেছে পাইকারী মাদকের ডিলার হিসেবে। এরা এলাকায় বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা নিয়োগ করে আবাদে মাদক কারবারি করছে। কেউ কেউ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কেউবা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। উভয় থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথেও রয়েছে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক।
সূত্র জানায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এইসব এলাকায় জমে ওঠে মাদক কেনাবেচার জমজমাট আসর। শহর থেকে মোটরসাইকেল যোগে বিভিন্ন বয়সী ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা ভিড় করে মাদক ক্রয় করতে। এই স্থানে সহজেই মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, ট্যাপেনডা সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক।প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইন-শৃখলা বাহিনী। দুঃখজনক হলেও সত্য মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালেরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ওই কারবারে যুক্ত হয়।
গাবতলী ও সারিয়াকান্দি আশপাশের স্থানীয় বেশ কয়েকজন মুরুব্বি প্রতিবেদককে জানান, পুরো এলাকা এখন মাদকে ভাসছে। প্রায় সময় পুলিশ এসে ধাওয়া দেয়। অনেক সময় মাদক বিক্রেতাদের সাথে কথা বলেও চলে যায়। মাদকের ভয়াল থাবায় এলাকার যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এলাকার নারীরাও মাদকাসক্তদের কারণে নিরাপদ নয়। দ্রুত মাদক রোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
জেলার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ জানান, এরকম অভিযোগ আমাদের কাছেও রয়েছে। আমরা মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসামি গ্রেপ্তার করে নিয়মিত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরও উপস্থিত মাদক না থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে আমরা যাদেরকে ধরি তাদের কাছ থেকে নাম সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। তবে মাদক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে এসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে।