নৌকায় সিল মারা আজাদকে ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নেওয়ার অভিযোগ

এফএনএস (নিজস্ব প্রতিবেদক) : : | প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:১৬ এএম

লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে ৫৭ মিনিটে নৌকায় ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনের ৪৩ সিল মারার ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ চলছে। অভিযোগ উঠেছে উপনির্বাচনে ব্যালট বইয়ে নৌকা মার্কায় অনবরত সিল মারার ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আজাদের বড় ভাই যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ইউপি সদস্য শাহানারা বেগম রুমি সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ও দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খাগুড়িয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। আজাদ ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নৌকায় অনবরত সীল মারার ভিডিও ভাইরালের ঘটনার পর থেকেই মাসুদের বাসায় আজাদ আত্মগোপনে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজাদের বড় ভাই আলমগীর হোসেন নিজেকে পল্টন থানাধীন বায়তুল মোকাররম ইউনিট যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর মোবাইল রেখে আজাদ আত্মগোপনে চলে যায়। সে কোথায় ছিল, কিভাবে ছিল কিছুই জানা ছিল না। খবর পেয়েছি শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল টিম তাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আজাদ এখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রয়েছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমি বাড়ি ছিলাম না। বাড়ি থেকে জানানো হয়েছে, আজাদ ভোরে আমাদের বাড়িতে আসে। পরে তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে- পুলিশ আগ থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল।

মাসুদের বোন ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য শাহানারা বেগম রুমি সাংবাদিকদের বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমাদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের মোবাইল নিয়ে গেছে। তারা আমাদেরকে মারধর করেছে। পরে আজাদকে তুলে নিয়ে যায়।

এদিকে বুধবার সকালে দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন, আশপাশের ভোটার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিয়াংকা দত্ত ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এ বি সিদ্দিক। পরে তদন্ত কর্মকর্তা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও  কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় চারটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা তদন্ড করছে। প্রকৃত ঘটনা কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ না করায় তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটো সাংবাদিকদের বলেন, আজাদকে আটক করা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।
জানাগেছে,গত রোববার লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে  প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আজাদ হোসেন। ভোটের পরদিন প্রকাশ্যে তাঁর নৌকায় সিল মারার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, আজাদ হোসেন এ সময়ে ৪৩টি ব্যালটে সিল মারেন।
ইতোমধ্যে এ উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত করা হয়েছে।একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW