আগামী ৩৪ দিন গুরুত্বপূর্ণ, সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে: পলক

এফএনএস: : | প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৪:০২ এএম

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে নির্বাচনকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সবাইকে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে এসে বিভাগের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের শুরুতে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পলক বলেন, আগামী ৩৪টি দিন, আমাদের দৈনন্দিন কাজ, আমি সবাইকে অনুরোধ করব এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনারা সবাই সতর্কতার সঙ্গে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টেলিকমিউনিকেশন যদি চলমান না থাকে, তাহলে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য সবকিছুই কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। ডাক যদি চালু না থাকে, তাহলে আমাদের যে লজিস্টিকস, পণ্য আনা-নেওয়া করা, তা দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে যাবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই ১৫ বছরের অর্ধেকটা সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। একদিকে ২০১৩, ১৪, ১৫ তিন বছর অগ্নিসন্ত্রাস, গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, মানুষ পোড়ানো, বাস পোড়ানো এগুলো চলেছে। তারপর ২০১৭, ১৮, ১৯ এ তিনটি বছর তিনি নির্বিঘেœ দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পেরেছেন। এরপর ২০২০-২১ সালে করোনা। আবার ২০২২-২৩ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। সব মিলিয়ে খেয়াল করে দেখবেন, ১৫ বছরের অর্ধেকটা সময় কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পলক বলেন, এখন আমরা দেখছি হরতাল-অবরোধের নামে একটি রাজনৈতিক দল, একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে প্রতিদিন নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। একজন নিরীহ ট্রাক ড্রাইভার মারা গেছেন। তাঁরা অসংখ্য গাড়ি পোড়াচ্ছে, রাস্তায় অবরোধ করছে। তিনি বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডাক বিভাগকে চলমান রাখতে হবে। পণ্য, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত, চিঠিপত্র লেনদেন যেন চালু থাকে। আমাদের বিটিআরসিকে দায়িত্ব পালন করতে হবে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, যাতে আমাদের টেলিকমিউনকেশনে কোনো রকম বাধা না হয়। অপরদিকে আমাদের স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনও চালু রাখতে হবে যেন আমাদের টেলিভিশন সেন্টারগুলো নির্বিঘেœ কাজ করতে পারে। পলক বলেন, ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্যপদ নেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন স্যাটেলাইটের আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন তিনি। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা দৈনন্দিন কাজগুলো অত্যন্ত সততার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করবেন। নির্বাচনকালে আমাদের কোনো ধরনের যোগাযোগ এবং সেবায় যাতে বিঘœ না ঘটে। আমাদের রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের কোনো সেবা যেন ব্যাহত না হয়। এদিকে জুনাইদ আহমেদ পলকের বাবা ছিলেন টেলিফোন এক্সচেঞ্জের অপারেটর, ছেলে পেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাওয়ার খবরে আবেগতাড়িত হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এসে সভাকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের শুরুতে স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি। বাবা ফয়েজউদ্দিন আহমেদ পেশায় টেলিকম এক্সচেঞ্জ অপারেটর ছিলেন জানিয়ে পলক বলেন, যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়ার সুখবরটি দিলেন, তখন নিজেকে আমি ধরে রাখতে পারিনি, আমি ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে যাই। কারণ আবার বাবা একজন টেলিকম অপারেটর ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা ফয়েজউদ্দিন আহমেদ গ্রামের ছেলে। তিনি চলনবিলের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নাটোর থেকে গিয়ে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে লেখাপড়া করতেন। খুবই অল্প বয়সে তিনি এইচএসসি পাস করেন, সেই সময়ে তিনি রাজশাহীতে একটি ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। পলক বলেন, যেহেতু তিনি খুব বেশি ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছিলেন না, যে কারণে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের অপারেটর পদে চাকরি নিয়েছিলেন। তিনি দিনাজপুরে গিয়ে জয়েন করেন। এ কারণে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লেখাপড়া শেষ করা হয়নি তার। তারপর বদলি হয়ে বগুড়ায় আসেন এবং আমার মায়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর সান্তাহার, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা এক্সচেঞ্জেও তিনি টেলিফোন অপারেটর পদে চাকরি করেন। ১৯৫৭ সালে তার বাবার চাকরি পাওয়ার কথা জানিয়ে পলক বলেন, আমি সকালে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আব্বার বেতন কত ছিল? তিনি বললেন ১২৫ টাকা! এসব কারণে টেলিকম খাতের সঙ্গে আমার একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। আমি ভাবলাম, আজ আপনাদের সঙ্গে তথ্যটি শেয়ার করি। পলক বলেন, যেদিন দায়িত্বের খবরটি পাই, মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম। মা মনে করেছিলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমি আসলে আনন্দটা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW