গবেষণায় দুর্বলতার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

এফএনএস: : | প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০১:৪৭ এএম

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় শিরোনাম হয় নেতিবাচক বিষয়ে। ইতিবাচক বিষয় খুব দুর্লভ! প্রসঙ্গে গণমাধ্যম ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার দিকে তাকালেও ভঙ্গুর দশা ভাসে। প্রযুক্তি ও গবেষণায় পুরো বিশ্বের এগিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের দেশের গবেষণা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি আমরা জ্ঞান সৃষ্টির আঁধার হিসেবে গণ্য করি, সেখানে উপযুক্ত গবেষণা থাকতেই হবে। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষার নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তারা একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যতটা আগ্রহী, গবেষণার বিষয়ে ততটাই অনাগ্রহী। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫ শতাংশ ২০২২ সালে গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এত কম বরাদ্দ রেখেছে, তা দিয়ে কোনো মানসম্পন্ন গবেষণা সম্ভব নয়। এর আগের বছরের প্রতিবেদনে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য শূন্য বরাদ্দ ছিল। এর অর্থ, ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা যে উচ্চশিক্ষার অপরিহার্য অংশ, সেটাই অগ্রাহ্য করেছে। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দের অপ্রতুলতাকে দায়ী করা হয়। বর্তমানে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ১৬৯টি; এর মধ্যে ৫৫টি সরকারি ও ১১৪টি বেসরকারি। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানক্রমে বাংলাদেশ যে ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে, তারও অন্যতম কারণ গবেষণায় দুর্বলতা ও অপ্রতুলতা, তা-ও আমাদের শিক্ষার অভিভাবকেরা বুঝতে চান না। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার বরাদ্দের ২ শতাংশ গবেষণায় ব্যয় করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও ১ শতাংশের কম ব্যয় করে থাকে। তবে এ কথাও স্বীকার করতে হবে প্রথম সারির কয়েকটি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় অধিক মনোযোগী হয়েছে এবং বরাদ্দও বাড়িয়েছে। তবে যে ১৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় শূন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা হয়েছে ঢিমেতালে। এছাড়াও  গবেষণা করতে অভিজ্ঞ স্থায়ী শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ চলছে নবীন ও খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে। এ অবস্থায় উন্নত মানের গবেষণা আশা করা যায় না। শিক্ষা-গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক গবেষকদের গুরুত্ব অনুধাবন করে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নরওয়ে, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে শিক্ষা নিয়ে পড়া ও গবেষণা করার জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। বিষয়টি আমাদের দেশেও ভাবা যেতে পারে। কারণ গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার ভিত্তি গড়ে না উঠলে শিক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করে রাষ্ট্র-উন্নয়নে দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুধু পাঠদান ও পরীক্ষার মধ্যে সীমিত থাকতে পারে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান সৃজনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে হবে, যেখানে দেশের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও আসতে উৎসাহিত হবেন। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত গবেষণাকে অগ্রাহ্য করে আসছে কিংবা কোনো বরাদ্দ রাখছে না, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এটা অনতিবিলম্বে রোধ করা দরকার। এই পঙ্গু শিক্ষাব্যবস্থা বংশ পরম্পর চলতে থাকলে ভবিষৎ পরিকল্পনাসমূহ অর্জন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই বিশ্বায়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW