দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে। অব্যহত ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ডলারের যোগান পেতে ব্যবসায়ীরা দ্বারস্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলোর কাছে তাতে সমাধান মিলছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ফলে ডলার সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। ডলার সংকটের কারণে দেশের চার বিমানবন্দরের মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজেও প্রভাব পড়ছে। সময়মত বিল পরিশোধ করতে না পারায় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের গতি থমকে গেছে। ডলার সংকট নিরসনে অর্থনীতিবিদরা আগামী দুই বছর মেগা প্রকল্পের কাজ না নেয়ার সুপারাশি করেছিলেন সরকারকে। অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা দিতে পারছেন না চলমান ডলার সংকটের কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট সমাধানে নানা পদক্ষেপ নিলেও সমাধান মিলছে না। তাই এ সংকট নিরসনে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। দুবছর ধরে হলো দেশে ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আয়ের চেয়ে ডলারের ব্যয় বেশি হওয়ায় সংকট বেড়েছে। আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে দেশে আমদানিনির্ভরতা কাটানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করার কাজটি কঠিন। এ কাজে সফল হওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ডলার সংকট মোকাবিলায় অর্থ পাঁচার রোধে নতুন আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার। জনশক্তি রপ্তানির হার বাড়লেও কেন রেমিট্যানস প্রবাহ জোরালো হচ্ছে না, তা খুঁজে বের করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপরও গুরুত্ব বাড়াতে হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের উপার্জিত অর্থ বৈধ পথে দেশে পাঠান, তা নিশ্চিত করা দরকার। দুর্নীতি ডলার সংকটকে তীব্র করে তুলছে। কাজেই দুর্নীতি রোধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। অর্থনীতিবিদরা বারবার সতর্ক করছেন নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে রিজার্ভ কমে গেলে সামনে ভয়াবহ দিন আসছে। এজন্য আমদানি সংকোচন নীতির দিকে ধাবিত হয়েও সমাধান মিলছে না। কারণ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ঠিকই আমদানি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের প্রবাহ পুনরুজ্জীবিত না করতে পারলে আগামীতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ঢেউ অব্যাহত রাখতে এলসি খোলা খুব স্বাভাবিক একটি কাজ। কিন্তু ডলার সংকটে ব্যাংকের এ নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়? সেই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককেই ঠিক করতে হবে। এজন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনরায় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ডলার সংকটের সময় শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। এ সময়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার বিকল্প নেই।