প্রায়ই শুনি মানুষ ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। দেশে ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। যখন একজন রোগী জীবন বাঁচাতে ডাক্তার কাছে আসেন আর অদক্ষ চিকিৎসকের সেবা নিয়ে মৃতুবরণ করছেন তখনই বিষয়গুলো সবার নজড়ে আসে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তখন নড়েচড়ে বসেন। সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মানুষ ভিনদেশে পারি জমান। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি বিদেশি চিকিৎসাসেবা জোটে? মোটেই না। আমাদের দেশে অদক্ষ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কারণে চিকিৎসা ক্ষেত্র বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কার্যত কোন কাজেই আসছেনা বা সঠিক সমাধান হচ্ছেনা। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। একজন সাধারণ রোগী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানতেই পারেন তিনি কি ওষুধ সেবন করছেন, কেন করছেন। রোগীদের সেবা দিতে ডাক্তার ও হাসপাতালগুলোর প্রতি রয়েছে দিকনির্দেশনা কিন্তু কয়জন তা মানছেন? সঠিকভাবে পালন করছেন? দেশে প্রায় এক হাজারের বেশি অনুমোদনহীন হাসপাতাল রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে ১২শ’র বেশি বেসরকারি হাসপাতাল চলছে নিবন্ধন ছাড়াই। এসব অবৈধ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা থাকেন জীবন-মরণ সংকটে। সম্প্রতি খতনা করাতে আসা দুই শিশুর মৃত্যুর পর অবৈধ হাসপাতালের বিষয়টি ফের সামনে আসে। এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও তৎপর এসব হাসপাতালের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। তবুও কীভাবে এসব হাসপাতাল দিনের পর দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের। হাইকোর্টকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সারাদেশে এক হাজার ২৭টি অবৈধ বা অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং এক হাজার ৫২৩টি বৈধ বা নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া নবায়নের জন্য আবেদন রয়েছে কয়েক হাজার। নতুন করে হাসপাতাল তৈরির আবেদনও রয়েছে। কিন্তু এসবের বাইরেও অন্তত কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই পরিচালনা চালাচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। যেগুলোর বেশিরভাগেরই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক, উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি না থাকলেও অনেক হাসপাতালেই করা হয় নানা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারও। যার খেসারত দিতে হয় রোগীদের। এমনকি কাউকে কাউকে জীবন দিয়েও খেসারত দিতে হচ্ছে। তাই দ্রুত অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাগুলো বন্ধ করুন। অনুমোদিত হাসপাতালগুলোতে দক্ষ জনবল, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করুন।