মানবপাচার রোধে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ

এফএনএস: : | প্রকাশ: ১ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:১০ এএম

মানব পাচার আধুনিক সভ্যতার অন্যতম জঘন্য অপরাধ। মানবপাচার বলতে মূলত বুঝায়, কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেয়া, কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করা, কাউকে প্রতারণা বা আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধার মাধ্যমে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করা। এই অপরাধের পেছনে থাকে বিশাল একটি চক্র। যে যে দেশে মানব পাচার হয়, সেই দেশের দালালদের মধ্যে থাকে যোগসূত্র। দলবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অপরাধটি সংঘটিত হয়। দেশে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে নারী, শিশু ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের পাচারের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সংকট থাকায় অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা প্রলোভনে পড়ে এসব পাচারকারীদের চক্রান্তের শিকার হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ নিরীহ লোকদের ফ্রি ভিসা বা কোনো  ধরনের শ্রম চুক্তিপত্র ছাড়াই ভালো চাকরি, বিয়ের সুযোগসহ নানান সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে, বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় ট্রলারে করে সমুদ্রপথে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন—সৌদি আরব, লেবানন, বাহরাইন প্রভৃতি দেশে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে বৈধভাবে পাসপোর্ট-ভিসা দিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনেককে। এক কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়ার পর অন্য কোনও কাজ কিংবা অন্য কোনও এলাকায় রাখা হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্টদের একাধিক লাইসেন্স থাকায় কখনো একটি লাইসেন্স বাতিল হলেও অন্য নামে তারা ঠিকই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবপাচারকারীদের একটি চক্র রয়েছে। যারা সারা দেশ বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ চক্র সাধারণ মানুষকে বিদেশে শ্রমের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে। পাচার চক্রের শিকার কেবল বেকার যুবক, কিশোর ও নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থীদের নানা লোভে নেয়া হয়ে থাকে। অনেক পর্যটকও এই চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। আবার মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্য অপহরণ করেও নিয়ে যাচ্ছে অনেককে। মানব পাচারের আরও একটি কারণ হলো অসচেতনতা। নারী-পুরুষ ও শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য মানব পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এজন্য সমাজের সচেতন মহলকে শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাচার রোধে দেশব্যাপী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও সামাজিক আন্দোলন করা খুবই জরুরি। মানব পাচার প্রতিরোধে জাতীয় ও গ্রাম পর্যায়ে সভা, সমাবেশ, সেমিনার, আলোচনা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করতে হবে। এতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, স্থানীয় নেতা, শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে যতই সচেতনতামূলক প্রচারণা হোক না কেন, জীবিকার মানোন্নয়ন ছাড়া মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW