রাজধানীতে কিছুতেই কমছেনা মশার উপদ্রব

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:২৪ এএম : | আপডেট: ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:২৫ এএম

বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর অন্যতম সমস্যা হয়ে রয়েছে মশার উৎপাত। ক্ষুদ্র এই কিট-পতঙ্গের কারণে মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। একদিকে যেমন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে দিন-রাত তার যন্ত্রণায় মানুষের স্বস্তি মিলছে না। কোথাও বসে থাকার জো নেই। মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশন বছরে শত কোটি টাকা ব্যয় করেও রাজধানীকে মশামুক্ত করতে পারছে না। মশার উপদ্রবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, বাসাবো, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, ভাষানটেক, উত্তরা, এয়ারপোর্টসহ রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষ। মশার কামড় থেকে বাঁচতে শিশুরা দিনের বেলায় মশারির নিচে পড়াশোনা করছে। রাজধানীবাসী কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়ে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলাতেও বাচ্চাদের মশারি টাঙিয়ে ঘুম পাড়াতে হচ্ছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পায়। এতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মত মশাবাহিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এক সময় সাধারণত বনজঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সারাদেশে সম্মিলিত সংখ্যার চেয়ে বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় মশার উৎপাত এবং ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে মশক নিধনে বাড়তি তৎপরতা ও বাজেট বৃদ্ধি করে নতুন নতুন ফমুর্লা প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। মাঠের বাস্তবতা হচ্ছে, গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর দেশে ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশী মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং দেড় হাজারের অধিক মানুষ ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করে। ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে খাল, ড্রেন ও জলাশয়ে গাপ্পি মাছ, তেলাপিয়া মাছ ও হাঁস ছেড়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎপত্তিস্থল খোঁজা ও ওষুধ ছিটানো হয়েছে। মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ড্রোন ব্যবহার এবং শতাধিক কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করলেও ভুল পদ্ধতি ও ভেজাল ওষুধ প্রয়োগের কারণে এসব কার্যক্রম বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি। উল্টো গত চার মাসে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কিউলেক্স মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। কিউলেক্স মশার কামড়ে নগরবাসী অতিষ্ঠ। দিনে মশার উৎপাত কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই টিকে থাকা দায়। অফিস, বাসাবাড়ি, দোকান কোথাও স্বস্তি নেই। গবেষণা অনুযায়ী, গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া। নগরীর বিভিন্ন জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার ও মশার ওষুধ কেনার জন্য প্রতি বছর দুই সিটি কর্পোরেশনকে প্রায় কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সঠিকভাবে ডোবা, জলাধার পরিষ্কার করা হচ্ছে না। সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন দীর্ঘদিন তারা মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেনি। বিভিন্ন জায়গায় সপ্তাহখানেক ধরে লোক দেখানো কিছু স্প্রে করা হচ্ছে তবে মশার উপদ্রব কিছুতেই কমছে না। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকায় সবসময়ই মশা থাকে। মাঝে মধ্যে কমলেও বেশির ভাগ সময়ই মশার উৎপাতে থাকা যায়না। তিনি বলেন, বর্তমানে মশার অত্যাচার অনেক বেড়েছে এখন চার দিকে শুধু রোগ আর রোগ। বর্তমানে এখন নতুন কোনো রোগ নিয়েও আশঙ্কায় থাকতে হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত দুই সিটিতে মশা মারতে প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি এবং ঢাকা উত্তরের খরচ হয়েছে ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এই টাকা মশা নিবারণের নানা যন্ত্রপাতি, কীটনাশকসহ আরও অনেক কাজে ব্যয় হয়। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে মশা নিধনে ১৫০ জন মশক সুপারভাইজারসহ ১ হাজার ৫০ জনবল কাজ করছেন। উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে ৭৫ জন মশক সুপারভাইজারসহ প্রায় ৬০০ জনবল আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটির মশা মারার বাজেট ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর দক্ষিণ সিটির বাজেট ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, দেশে প্রায় ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ১৬ প্রজাতির মশার প্রকোপ বেশি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে যে কয়েক প্রজাতির মশা থাকে, এর মধ্যে কিউলেক্স ৯৫ শতাংশের বেশি। কিউলেক্স মশার কামড়ে গোদ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক  স্বাস্থ কর্মকর্তা বলেন, মশা না কমার প্রধান কারণ হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এর সঙ্গে রয়েছে ভাসমান জনগোষ্ঠীর পরিবেশদূষণ। মানুষ ময়লা ফেলে নর্দমা ভরে রাখে। আবর্জনা ফেলে খালগুলো ভরে রেখেছে আগেই। মশা নিধনে আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW