ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারী জায়গার কেটে নেয়া ধান উদ্ধারের পর অভিযুক্তদের ফেরৎ দেওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে দু’দল গ্রামবাসী। সংঘর্ষে কামাল উদ্দিন (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নারী পুরূষ আহত হয়েছে।শনিবার সকালে উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামে কাউছার মিয়া ও রিপন মিয়ার লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহজাদাপুর মৌজার তিতাস নদীর পাড় সংলগ্ন রিপনদের ফসলি জমি। ওই জমির আইলের পরই নীচের অংশ সরকারী জায়গা। ওই জায়গায় ধান চাষ করেছে কাউছার গংরা। এতে বাঁধা দিয়েছে রিপন গংরা। দাঙ্গা হাঙ্গামা এড়াতে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সভা করে উভয় পক্ষকে ওই জমিতে যেতে নিষেধ করেন। গত শুক্রবার ভোরে কাউছার গংরা শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমির ধান কেটে নিয়ে যায়। এতে ওই এলাকায় দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কেটে নেয়া ধান উদ্ধার করেন। দিন শেষে জিম্মার কথা বলে ওই কাউছারের কাছেই দিয়ে আসেন। এতে জয় মনে করে আনন্দে শুক্রবার রাতে বাজি ও ফটকা ফাটায় কাউছার গংরা। ক্ষুদ্ধ হয় রিপন ও তার দলের লোকজন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত শাহজাদাপুর পশ্চিম প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু ততক্ষণে আহত হয়ে নিহত হন শাহাদাৎ আলীর ছেলে কামাল উদ্দিন (৫৬)। আর ইউপি চেয়ারম্যান আছমা বেগমসহ আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত: অর্ধশতাধিক নারী পুরূষ। সংঘর্ষে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ ব্যক্তিকে আটক করেছেন। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সেখানে রিপন নামের ব্যক্তি মালিকানা জায়গা সংলগ্ন স্থানে সরকারী জায়গা রয়েছে। ওই সরকারী জায়গা চাষাবাদকৃত ধান নিয়ে রিপন গংদের সাথে কাউছার মাসুক আফজালদের বিরোধ হয়। গত কিছুদিন পূর্বে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন অফিসার ইনচার্জ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরেও সভা হয়। উভয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় সরকারী ওই জমির ধান দুই পক্ষের কেউ কাটবেন না। জমির ধান চেয়ারম্যানের তত্ববধানে কাটা হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সম্মত হয়ে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে গেছেন। রিপন জানায় এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে শনিবার ভোরে ইউপি সদস্য জুয়েল, নাজমা বেগম, আ.লীগ নেতা শেখ মুন্না, আজিজ ও ময়েজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই জমির ধান কেটে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুকিয়ে রাখা ধান উদ্ধার করে জব্দ করেছেন। এর আগে তারা ওই সরকারী জায়গা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করেছে। উদ্ধারকৃত ধান পুলিশ অভিযুক্তদের প্রধান কাউছারের কাছেই জিম্মা দিলেন। এটা কেমন বিচার? তারা ওই ধান পেয়ে সারারাত বাজি আর ফটকা ফাটিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে রইল। আশপাশের লোকজন ফটকার শব্দে রাতে ঘুমাতে পারেনি। এর জের ধরেই লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। ইউপি সদস্য নাজমা বেগম, জুয়েল ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মো. মুন্না তাদের বিরূদ্ধে অভিযোগকে মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমরা ধান কাটায় নেতৃত্ব দেয়নি। যার ধান সেই কেটে নিয়ে গেছে। সারা দেশেই সরকারী জায়গায় এই ভাবে লোকজন ধান চাষ করে থাকে। ওদিকে কামাল উদ্দিনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ক্ষুদ্ধ লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছি। আর উদ্ধার হওয়া ধান চেয়ারম্যান ও মেম্বার কেউই জিম্মায় নিতে চাই না। তাই একজন লোকের কাছে রেখে এসেছিল। সংঘর্ষে কামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি। হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি।