নওগাঁর মহাদেবপুরে অটোচার্জার চুরির অভিযোগে আরমান হোসেন সাকিদার (৩৫) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। তারা প্রচার করছে যে, ওই যুবক চুরি করে ধরা পড়ার পর লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন। থানা পুলিশ এ ব্যাপারে হত্যা মামলা রেকর্ড করলেও হত্যা রহস্য উদঘাটন করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পুলিশ বলছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাবার পরেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিহত আরমান হোসেন সাকিদারের বাবা জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রায়খালি খাঁপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন সাকিদার অভিযোগ করেন যে, তার ছেলের মুরগির ফার্মের ব্যবসায় রয়েছে। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আরমান গত ৬ এপ্রিল সকালে মহাদেবপুর গরুহাটিতে এসেছিলেন। হাটের ইজারাদারের লোকেরা তাকে চুরির অভিযোগে আটক করে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে বেদম মারপিট করে হত্যা করে লাশ ইজাদারের ঘর সংলগ্ন একটি গুদাম ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মহাদেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন জানান, গত ৬ এপ্রিল দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পালসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা সদরের গরুহাটির টোল আদায় ঘর সংলগ্ন চকগোবিন্দ গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে জিয়াউর রহমানের আলু ও ঝাল রাখার গুদামঘর থেকে আরমানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়ের হলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাবার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।
ওসি জানান, নিহত আরমানসহ আরো দুজন একটি মোটরসাইকেলযোগে গরুহাটি এসে একটি অটোচার্জার ভ্যানের লক ভেঙ্গে চুরি করার চেষ্টা করে বলে স্থানীয়রা জানান। এই চুরির অভিযোগে হাটের লোকজন তাকে আটক করে মারপিট করে। আরমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি চুরির মামলা রয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার এলাকার লোকজন মিষ্টি বিতরণ করেছেন বলে শুনেছেন বলেও জানান তিনি। থানা পুলিশ আরমানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং যে অটোচার্জার ভ্যান চুরি করার চেষ্টা করেছিল তা জব্দ করেছে।
ওসি আরো জানান, লোকজন বলছেন আরমান লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ থাকলে এ ব্যাপারে আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হবেনা। আর হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ থাকলে আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জানতে চাইলে, ওই অটোচার্জারের মালিক উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের জোতহরি গ্রামের মৃত খিরিশ চন্দ্র পাহানের ছেলে অসিত চন্দ্র পাহান জানান, সকাল ৭টায় তিনি তার অটোচার্জারে করে হলুদ নিয়ে হাটে গিয়েছিলেন। সকাল ৯টার দিকে লোকজন জানায় তার চার্জার চুরি হয়ে যাচ্ছে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন চোরকে ঘরের ভিতর আটকে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নাই বলেও জানান তিনি।
ওই ঘরের মালিক জিয়াউর রহমানের খোঁজ করে কোথাও পাওয়া যায়নি। হাটের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি দুপুরের পর হাটে এসেছেন। তাই সকালের ঘটনার বিষয়ে তার কোন দায় নাই বলেও জানান তিনি। তবে তিনি জানান, চুরি করে ধরা পড়ে আরমান লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি তিনি না দেখেই কেন আত্মহত্যার কথা বলছেন তা তিনি বলতে পারেননি। চোর ধরার পর তার লোকেরা আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সাথে সাথেই থানা পুলিশে দেয়নি কেনো তারও কোন সন্তোষজনক জবাব তিনি দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, হাটের ইজারাদারের লোকেরা আরমানকে আটক করে দুই হাত দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে বেদম প্রহার করে ওই গুদাম ঘরে আটকে রাখে। মারাত্মক আহত অবস্থায় হাতের দড়ি খুলে আত্মহত্যা করা অসম্ভব। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো ১৫টি চুরির মামলা থাকায় লজ্জায় আত্মহত্যা করার প্রশ্নই ওঠেনা।
একটি বিস্বস্ত সূত্র জানায়, ঘটনার সময় কারা আরমানকে আটক করে প্রকাশ্য দিবালোকে মারপিট করেছে তা সবাই দেখেছেন। কিন্তু তাকে আত্মহত্যা করতে কেউ দেখেননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মারপিট করার পর লজ্জায় যদি আরমান আত্মহত্যা করেই থাকেন তবে যারা তাকে মেরেছেন তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠবে। এজন্য তাদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- হতে পারে। এবিষয়টি না জেনেই ঘটনাটিকে তারা আত্মহত্যা বলে প্রচার করছেন। হত্যা বা আত্মহত্যা উভয়ক্ষেত্রেই তারা অভিযুক্ত হবেন। তারা যতই প্রভাবশালী হোন না কেনো দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।