ব্যাট-বল ও নেতৃত্বে বছরজুড়ে যা পারফরম্যান্স, তাতে স্বীকৃতিটা যেন অবধারিতই ছিল প্যাট কামিন্সের জন্য। উইজডেনের ‘লিডিং ক্রিকেটার ইন দা ওয়ার্ল্ড’ মনোনীত হলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কই। মেয়েদের ক্রিকেটে ‘লিডিং’ ক্রিকেটারের সম্মান পেলেন ন্যাট সিভার-ব্রান্ট। দুজনই এই স্বীকৃতি পেলেন প্রথমবার। কামিন্সকে দিয়ে এক যুগ পর ‘লিডিং’ ক্রিকেটার হতে পারলেন অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দলের কেউ। তার আগে সবশেষ এটি জিততে পেরেছিলেন ২০১২ সালে মাইকেল ক্লার্ক। মেয়েদের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সিভার-ব্রান্ট অর্জন করলেন এই স্বীকৃতি। গত জানুয়ারিতে আইসিসির বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারের স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন এই দুজনই। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের ২০২৪ সালের সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সোমবার। ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের দলিল এই অ্যালমানাকের ১৬১তম সংস্করণ এটি। উইজডেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও দারুণ মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি ‘বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার-এর তালিকায় এবার জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাওয়াজা, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাশলি গার্ডনার এবং ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক ও মার্ক উড। মূলত ইংলিশ গ্রীষ্মে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের বিবেচনায় নেওয়া হয় পাঁচ বর্ষসেরার বাছাইয়ে। একাধিকবার এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না কাউকে। উইজেডেনের ‘লিডিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার’ হয়েছেন এবার হেইলি ম্যাথিউস। ২০ ওভারের ক্রিকেটের সেরায় প্রথম নারী ক্রিকেটার এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। টানা আট টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ-সেরা হওয়ায় অসাধারণ কীর্তি গড়েছেন তিনি গত বছর। এই সময়ে রান করেছেন তিনি ৮৮ গড় ও ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে, উইকেট নিয়েছেন স্রফে ১২ গড়ে। বর্ষসেরা টেস্ট পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি ‘উইজডেন ট্রফি ফর আউটস্ট্যান্ডিং ইন্ডিভিজুয়াল টেস্ট পারফরম্যান্স’ জিতেছেন এবার ট্রাভিস হেড। গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের ইনিংসটি তাকে এনে দিয়েছে এই সম্মান। ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা এমসিসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গতবছর থেকে সেরা টেস্ট পারফরম্যান্সকে আলাদা করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবার এটা জিতেছিলেন ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো। কামিন্সের 'লিডিং' ক্রিকেটার হওয়াটা অনুমিতই ছিল। গত বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ডে গিয়ে অ্যাশেজ ধরে রাখে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে তার নিজের পারফরম্যান্সও ছিল দুর্দান্ত, কার্যকর কিছু অবদান রেখেছেন ব্যাট হাতেও। ২০০৩ সাল থেকে 'লিডিং' ক্রিকেটারের খেতাব দিয়ে আসছে উইজডেন। সবশেষ এটি জিতেছিলেন বেন স্টোকস। চার বছরের মধ্যে তিনবার এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। টানা তিনবার এটি জয়ের একমাত্র কৃতিত্ব ভিরাট কোহলির। মেয়েদের ক্রিকেটে সিভার-ব্রান্টও কাটিয়েছেন অসাধারণ এক বছর। অ্যাশেজে পিঠেপিঠি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৬ বলের সেঞ্চুরিতে গড়েছেন ইংল্যান্ডের রেকর্ড। ভারতের উইমেন'স প্রিমিয়ার লিগের নিলামে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ইংলিশ ক্রিকেটার। বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের সবাই পেয়েছেন অ্যাশেজে ভালো করার পুরস্কার। দুই দল মিলিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ ৪৯৬ রান করেছিলেন উসমান খাওয়াজা, সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকার করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। হ্যারি ব্রুক অ্যাশেজে করেন ৩৬৩ রান। এর আগে নিউ জিল্যান্ড সফরে দুই টেস্টে ৩২৯ রান করে হন সিরিজ-সেরা। অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে খেলতে না পারলেও তৃতীয় টেস্টে ফিরে সিরিজের মোড় ঘুরিয়ে দেন মার্ক উড। গতিময় ও আগ্রাসী বোলিংয়ে তিন টেস্টে শিকার করেন ১৪ উইকেট। নারী অ্যাশেজের একমাত্র টেস্টে ১২ উইকেট শিকার করেন অ্যাশলি গার্ডনার। সেই ১৮৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া মাত্র দশম নারী ক্রিকেটার তিনি। সেরা পাঁচে সবশেষ নারী ছিলেন ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ারই এলিস পেরি। গার্ডনার পরে ফর্ম হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ পড়ে যান। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের বড় আকর্ষণ থাকে সবসময়ই সম্পাদকের কলাম। এবারের লেখায় অনুমিতভাবেই অ্যাশেজকে প্রাধান্য দিয়েছেন সম্পাদক লরেন্স বুথ। ইংল্যান্ডের 'বাজবল' ও প্রাসঙ্গিক আরও অনেক কিছু উঠে এসেছে তার লেখায়। আলাদা করে উল্লেখ করেছেন তিনি স্টুয়ার্ট ব্রডের কথাও। ক্যারিয়ারের ৬০০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়ে শেষ বলে উইকেট নিয়ে বিদায় নেওয়া ইংলিশ গ্রেটকে 'কুর্নিশ' জানিয়েছেন উইজডেন সম্পাদক। সম্পাদকের কলামে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছিল, 'স্পিরিট অব ক্রিকেট' নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ। সাম্প্রতিক সময়ে তুমুল আলোচিত-সমালোচিত এই ব্যাপারটির পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেটের আবেদন প্রবলভাবে কমে যাওয়া নিয়ে শঙ্কারও তুলে ধরা হয় তার লেখায়।