সড়ক-মহাসড়কে এখন চলাচল সাধন মানেই নিজের জীবন বাজি রেখে চলাচল করা। সড়ক-মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের দাপটে দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ ও নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং-ওভারটেকিং ও বাড়তি মুনাফার জন্য বাড়তি ট্রিপের প্রবণতা, চালকদের উদাসীনতা ও সড়ক-মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত রোড ডিভাইডার না থাকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিআরটিএ’র তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে সারা দেশে ৬২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন মানুষ মারা গেছেন। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন ৬৮৪ জন। এর জন্যে ট্রাফিক নিয়ম প্রয়োগের ঘাটতিও অনেকাংশে দায়ী। এজন্য সব সংস্থাকে একসঙ্গে সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে। তবেই এসব কার্যক্রমের সুফল পাবে যাত্রী সাধারণ ও দুর্ঘটনাও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে যাত্রীদের আশ্বস্ত সাধন হয়েছিল যে এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে। ঈদের সামনে কয়েকটি নতুন সড়ক খুলেও দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে যাত্রীসাধারণ ভেবেছিলেন, তাঁরা নিরাপদে বাড়ি যেতে এবং বাড়ি থেকে ফিরে আসতে পারবেন। অথচ অনেকের পাশে সেই আনন্দযাত্রা বিষাদে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্য অথবা বেশির ভাগ সদস্য দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাও গেছেন। ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে সড়ক ও নৌপথে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিটি ঘটনার পেছনে কারও না কারও অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা আছে। তাই সংশ্লিষ্টদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে। যেহেতু সরকারি হুকুম অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে ইজিবাইক, সিএনজিসহ ভিন্ন থ্রি-হুইলার। আর এসবের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। অতীতের চেয়ে এই চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে অহরহ দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। বেপরোয়া গতিতে চালানোয় দুর্ঘটনার অন্যতম উদ্দেশ্য এটি। এছাড়াও সড়ক ও নৌপথে লক্কড়-ঝক্কড় বাহন মেরামত করে নামানোর ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বাড়ছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ, ডিএমপি, নৌ-পুলিশ, রেলওয়ে শাসনকর্তা পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের একযোগে পেশা করতে হবে। দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক, রেল ও নৌ-পথে সার্বিক পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও তদারকি বাড়াতে হবে। কেননা দুর্ঘটনার কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- কে কার সামনে বেশি যাত্রী-পণ্য তুলবে, গন্তব্যে পৌঁছাবে, পুনরায় ফিরে আসবে, এমন মন-মানসিকতায় চালকদের অসম প্রতিযোগিতা, রেষারেষি আর রোড ডিভাইডার না থাকার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়াও নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না থাকলে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নে উদাসীন হলে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়বেই।