শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত

এফএনএস ধর্ম: : | প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

রোজার প্রতিদান দেবেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। উদ্দেশ্য মুমিন নর-নারী রোজার আমল করে একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। বিগত একটি মাস পবিত্র মাহে রমজানে ইবাদত বন্দেগি করে প্রত্যেক মুমিন হৃদয় প্রশান্তিতে ভরপুর। আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। আল্লাহতায়ালার একান্ত ইচ্ছে তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁর ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সরল সঠিক পথ সিরাতুল মুসতাকিমে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, মিলাদ শরিফ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি। মানব জাঁতি মূলত তখনই মহান আল্লাহতায়ালার পাশে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি পেশা হবে একমাত্র আল্লাহতায়ালারই উদ্দেশে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সুসম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে বেশি মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ, রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা গ্রহণ সাধন করেন তখন তাকে ভিন্ন নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা গ্রহণ সাধন হওয়ার লক্ষণও বটে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলিলুল যত্ন সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, তার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর-১১৬২)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের উক্তি উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারিমে। সুরা আন আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ পেশা করল সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে।’ সুবহানাল্লাহ। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি)। হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। অতএব তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি)

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW