সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হচ্ছে কিশোররা, পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

এফএনএস: : | প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:৫১ এএম

দেশে কিশোর গ্যাং হয়ে উঠেছে একটি শ্রেণির অস্ত্র। পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদে গড়ে উঠছে অসংখ্য কিশোর গ্যাং। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই দশক আগেও নিজেদের শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিত; তখন গুলি করে হত্যার প্রবণতা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এসব ঘটনায় আইনি জটিলতায় পড়তে হয় বিধায় তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক স্বার্থ হাসিলে তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করে এদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। কারণ, কিশোর অপরাধে আইনের দিক থেকে অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। ফলে নেতাকর্মীরা এখন কিশোরদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিশ ও নেট ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজিসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব গ্যাংয়ে স্কুল পড়ুয়া ও সদ্য কলেজে পা দেওয়া ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি তরুণরাও এসব গ্যাংয়ে রয়েছে। ইতঃপূর্বে নানা মহল এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কিশোর গ্যাং দমনে চালিয়েছে বিশেষ অভিযান। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। এর কারণ হলো, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকরা ক্ষমতাশালী এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের, বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এসব পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, এমনকি সাবেক সংসদণ্ডসদস্যও। কাজেই কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে কেবল গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করলেই চলবে না, তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। বস্তুত কিশোর গ্যাংগুলো ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে অহরহ খুন-খারাবি করছে এই কিশোররা। এ অবস্থায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন এদের পৃষ্ঠপোষকদের দমন করা। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। এ ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্যের সুযোগ নেই। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দমনে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ কঠোর অবস্থানের যেন পরিবর্তন না হয় কোনোভাবেই। অন্যদিকে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে দেশে অপরাধই যে শুধু বাড়ছে তাই নয়, এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম জীবনপাঠের গোড়াতেই পরিচিত ও সম্পৃক্ত হচ্ছে অপরাধের সঙ্গে। আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন না হয়; বরং তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতাই কাম্য।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW