শিশুরা ফিতরাত তথা উত্তম স্বভাবের ওপর জন্মগ্রহণ করে। শিশুকালে তার মনমানসিকতা নানামুখী চিন্তা-চেতনা ও ইচ্ছাশক্তি গড়ার জন্য উর্বর থাকে। তাই শৈশবে যদি তার উর্বর মননে কোনো ভালো অভ্যাস বা চেতনার বীজ বপন করা হয়, তাহলে এর ওপর তার জীবন গড়ে ওঠে। এজন্য সাহাবায়ে কিরাম তাঁদের সন্তানদের শৈশব থেকেই দ্বিনের পথে ত্যাগ স্বীকারের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তাদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। আবার কখনো জিহাদের ময়দানে নিয়ে যেতেন। উৎসাহ দিয়ে সিয়াম রাখাতেন। নারী সাহাবিরাও তাঁদের শিশুসন্তানকে দ্বিনি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যপারে সচেষ্ট ছিলেন। নারী সাহাবি রুবাই বিনতে মুআওবিজ (রা.)-এর কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) আশুরার দিন ভোরে মদিনার আনসারদের বসতিতে লোক পাঠিয়ে ঘোষণা দেন-‘সকালে যে খেয়ে নিয়েছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে কাটায়, আর যে সিয়াম পালনের অবস্থায় সকাল করেছে সে যেন সিয়াম সম্পন্ন করে।’ বর্ণনাকারিণী বলেন, ‘এই ঘোষণা শুনে আমরা পরবর্তী সময়টুকু রোজা অবস্থায় কাটালাম এবং আমাদের বাচ্চারাও রোজা রাখল। তাদের জন্য আমরা একপ্রকার পশমি খেলনা জোগাড় করে রাখলাম। যখন তাদের কেউ খাবারের জন্য কেঁদে উঠছিল, তখনই আমরা তাদের সামনে ওই খেলনা এগিয়ে দিচ্ছিলাম। ইফতার পর্যন্ত তারা এভাবেই পার করছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৬০) আল্লাহর ইবাদতের জন্য সন্তানদের প্রশিক্ষিত করতে সাহাবিদের যে অন্তহীন প্রচেষ্টা ছিল তা উপর্যুক্ত হাদিস থেকে সহজেই অনুমেয়। বিশিষ্ট তাবেঈ সিলাহ ইবনে আশইয়াম (মৃ. ৮৩ হি.) তাঁর পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে স্বীয় পুত্রকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে প্রিয় পুত্র! তুমি এগিয়ে যাও এবং লড়াই করে শহীদ হও, যাতে আমি তোমাকে আল্লাহর সামনে পেশ করতে পারি।’ তাঁর পুত্র অস্ত্র ধারণ করলেন এবং লড়াই করে শহীদ হলেন। এরপর সিলাহ ইবনে আশইয়াম (রহ.) এগিয়ে গেলেন। তিনিও যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। যুদ্ধ শেষে অন্য নারীরা সিলাহ (রহ.)-এর স্ত্রী মুআজাত আল-আদাবিইয়াহ (রহ.)-কে সান্ত¡না দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে সমবেত হলেন। তিনি আগত নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি আপনারা আমাকে অভিনন্দন জানাতে আসেন, তাহলে আমি আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আর যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এসে থাকেন, তাহলে চলে যেতে পারেন।’ (আহমাদ ইবনে হাম্বল, কিতাবুজ জুহদ, পৃষ্ঠা-১৭০) মহান আল্লাহ আমাদের ও আমাদের সন্তানদের ইসলামময় জীবন দান করুন।