হিজড়া গুরু বৃষ্টি বলেন- “এখন আমার ছেলেদের জন্ম নিবন্ধন থাকলেও তারা ভোটার আইডি থেকে বঞ্চিত। হিজড়ারা এমনিতেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, তার উপর সম্পদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। চলার পথে লোকজনের বিভিন্ন কটু কথা শুনতে হয়। সমুদ্র সৈকতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি রাস্তায় হাঁটার সময় হিজড়াদের লক্ষ্য করে অনেকে বোতল, ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। অনেক যানবাহনেও হিজড়াদের তুলতে চায় না।
জীবনের চরম দূঃসময়ে অর্থাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে সেখানেও লেগে থাকে ভোগান্তি। কারণ হাসপাতালে হিজড়াদের জন্য কোন লাইন থাকে না। নিজের বসত হারা হিজড়াদের বাসা ভাড়াও কেউ দিতে চায় না। নিজেদের অসংখ্য ভোগান্তির সাথে মৌলিক অধিকার থেকেও হিজড়াদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এত সমস্যা সংকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে হিজড়া জনগোষ্ঠিকে। দূর্ভোগ-লাঞ্চনা যেন নিত্য সঙ্গী। এ যেন মরার মতোই বেঁচে থাকা”।
কক্সবাজারে হিজড়া গুরুদের আইনি সহায়তা ও মানবাধিকার বিষয়ক পরামর্শ সভায় অংশগ্রহনকারি হিজড়া গুরুরা এভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠির নানান সমস্যা তুলে ধরেন। রোববার, ১২ মে কক্সবাজার হোটেল রিগ্যাল প্যালেস কনফারেন্স রুমে এ সভার আয়োজন করে বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠনের এসসিজি প্রকল্প। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ লিগাল এইড এ- সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর ক্লাস্টার লিড ইনক্লোশন এ- সোশ্যাল জাস্টিস ফারহানা জারিক কান্তা।
সভায় সভাপতিত্ব করে, বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবুল মনসুর। এতে সংগঠনের পরিচিতি এবং প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে সম্পর্কে ধারনা প্রদান করেন, বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠন রামু উপজেলা সমন্বয়কারী উজ্জ্বল বড়ুয়া। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- ব্লাস্টের সিনিয়র আইনজীবী শহীদুল ইসলাম।
সভায় হিজড়া গুরুদের নানা সমস্যা পর্যালোচনা করে, বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠনের পক্ষ থেকে হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়ন ও সমস্যা নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ লিগাল এইড এ- সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর মাধ্যমে হিজড়াদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার আইনি সহায়তা প্রদান করা। নির্বাচন কার্যালয়, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সমন্বয় করে হিজড়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধন পেতে সহায়তা করা। বিভিন্নস্থানে হিজড়াদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা প্রদান এবং সমুদ্র সৈকতে হিজড়াদের হয়রানি বন্ধে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা।