যা ফেলে যাচ্ছি তা-ই ফিরে আসবে!

রাজু আহমেদ : | প্রকাশ: ১৪ মে, ২০২৪, ০৫:৫৪ এএম

সৌন্দর্য যদি আপনার শরীরে হয় তবে তা নিয়ে বড়াই করা বরং বাদ দেয়াই উচিত! মাত্র এক সিজনের ঘামাচিতেও অপরূপ রূপ অরূপে বদলে দিতে পারে। বছর দুইয়ের ব্যবধানে আকর্ষণীয় লাবণ্য ফ্যাকাশে হতে পারে, যতেœ পোষা চুল ঝরে যেতে পারে এবং উপটান মাখানো চামড়া কুঁচকে যেতেও পারে। চোখের নিচের কালো দাগ হতাশার সাক্ষ্য বহন করতে পারে! রাত জাগা তারা চাঁদের উজ্জ্বলতায় দুঃখ বাড়াতে পারে! বয়সের ছাপ কাউকে ছাড় দেয় না। রূপের আড়ালে থাকতে পারে একাকাশ দুঃখের মেঘ। ফাগুনের আগুনে পোড়াতে পারে অনন্তকাল।  কিন্তু আপনার সৌন্দর্য যদি আপনার কথা ও আচরণে থাকে, আপনার সরলতা ও সাদামাটা জীবনযাপনে হয় তবে সেটা সবাইকে দেখিয়ে বেড়ান। আপনার এ গুণ আড়াল করলে বরং গুনাহ হতে পারে। মানুষ মন্দে সংক্রমিত হওয়ার থেকে বরং ভালোর সংস্পর্শ আসুক। সুন্দর কথা দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করুন। চিত্তাকর্ষক আচরণ দিয়ে মানুষকে আপন করুন। 
কারো রূপণ্ডযৌবন, অর্থ-ক্ষমতা কোনটাই স্থায়ী নয়। এসব এই আছে আবার এই নাই। অথচ সদগুণ সারাজীবনের সম্পদ। আপনি যেদিন চেয়ারে থাকবেন না, যেদিন পদণ্ডপদবী থাকবে না এমনকি যেদিন পৃথিবী থেকে ছায়া মুছে যাবে সেদিনগুলোতেও আপনার মহৎ কর্ম ও গুণ বেঁচে থাকবে। মন্দের কাছে সব মন্দ বিনামূল্যে বেঁচে দিন। আপনার যা কিছু ভালো, যা কল্যাণকর তা আপনাকে উত্তম বিনিময় দেবেই। কারো বিপদের সময় একটু ভরসা দিয়েছিলেন,  কারো দুঃসময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিংবা ব্যস্ততার মাঝেও কারো সাথে হাসি দিয়ে কথা বলেছিলেন- এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো আপনার মনে নাও থাকতে পারে। কিন্তু যিনি উপকৃত হয়েছিলেন তিনি আপনার কাছে ঋণের জালে বাঁধা। সেখান থেকে আপনার প্রশংসা প্রকাশে, তার মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রশান্তিতে আপনার সামনের অদৃশ্য কোন বিপদ কেটে যাচ্ছে। আপনি ভাবতেও পারছেন না এমন সৌভাগ্যের পথ উন্মোচিত হয়ে যায়। জগতের একটি ভালোকাজও সে কাজের কর্তাকে বিনিময় না দিয়ে শেষ হয় না। ভালোর রেশ চিরকাল চতুর্মাত্রিক হয়ে থেকে যায়। 
মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা, হাসি দিয়ে কথা বলা কিংবা কেউ ভুল করলে তাকে গোপনে শুধরে দেওয়া এসব পারিবারিক শিক্ষার অংশ। কারো সাথে সুসম্পর্ক রাখতে একটু খোঁজখবর রাখাই যথেষ্ট। কারো হৃদয় পেতে, কারো মনে থাকতে টাকা-কড়ির ছড়াছড়ি করতে হয় না বরং হাসিমুখে ভালো আছে কিনা-সেটা জিজ্ঞেস করলেই হয়। কাউকে গালি দিয়ে, বকে কিংবা চোখ রাঙিয়ে কেউ কারো আপন হতে পেরেছে? রূপের রসে কে কাকে কতদিন ধরে রাখতে পেরেছে? মানুষের মন জয় করতে তাকে মুগ্ধ করার মত কিছু গুণ থাকতে হয়। বিশ্বস্ততা এবং উপকারী স্বভাবের চেয়ে বড় সৌন্দর্য আর কিছুতেই নাই। কারো প্রকাশ্য কিংবা গোপন ক্ষতি করার মাঝে বাহাদুরি রকমের কিছুই নাই। বরং গোপনে উপকার করা, আড়ালে প্রশংসা করা এবং সুনাম ছড়িয়ে দিয়ে মানুষ মানুষের কাছে বড় হয়ে ওঠে। 
সৌন্দর্য মন্দ একথা ভুলেও বলিনি। তবে সুন্দর তখন-ই সুশোভিত হয়ে ওঠে যখন সেই মানুষের বাক্য, ব্যবহার এবং বিশ্বাস সুন্দর হয়। যে মানুষের চিন্তা যত সম্মৃদ্ধ, স্বচ্ছ এবং মানবহিতৈষী সেই মানুষের সৌন্দর্য তত অপরূপ। গাত্রবর্ণ ধবল কিংবা ধূসর দিয়ে, উচ্চতা কম কিংব বেশি দিয়ে এবং ওজন ভারী কিংবা হালকা দিয়ে মানুষ মাপার বাটখারা এই আলোতে অকার্যকর। এখন মানুষের মূল্যায়ণ হয় তার সদাচারণে, মানুষ ভালোবাসা অর্জন করে তার সদালাপে এবং মানুষের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ে তার সচ্চরিত্রে। কত অর্থবান অর্বাচীন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কত রূপবান-রূপবতী নিন্দার তুবড়িতে কুপোকাত হয়েছে। কত মুকুল বকুল হয়ে ওঠার আগেই অহংকার-দম্ভে তলানিতে পতিত হয়েছে। অথচ কৃতজ্ঞতা ও বিনয়, সততা ও সৎকর্মে কত কত বুনোফুল পূজার ঝাঁপিতে শোভা বাড়িয়েছে। আজ মানুষ মানুষের থেকে ভালো আচরণ চায়। কানে মধুর শোনায়, অন্দর-অন্তর তৃপ্ত করে এমন বাক্যবানে নিজেকে সিক্ত করতে চায়।
যেকোনো পরিস্থিতিতে মুখের হাসি যেন মলিন না হয়। নিজের জন্য না হলেও অপরকে হাসিমাখা মুখ উপহার দিন। নিঃসন্দেহে কল্যাণকর ফল পাবেন। সুন্দর সুন্দর কথা বলুন। মানুষ মানুষের থেকে একটু ভালো আচরণ, একটুকু বিশ্বাস এবং সামান্য সৌজন্যবোধ প্রত্যাশা করে। যে পরিস্থিতিতেই থাকুন, মানুষের সামনে সবসময় মানবীয় সৌন্দর্যের মোড়কে নিজেকে উপস্থাপন করবেন। আপনার বর্ণ, আপনার বংশ কিংবা আপনার উচ্চতা বদলানোর ক্ষমতা আপনার নাও থাকতে পারে কিন্তু আপনার আচার-ব্যবহার, ভাষা এবং বিশ্বাস ও চিন্তা বদলানোর ক্ষমতা নিশ্চয়ই আপনার আছে। শুভের চর্চায়, অপরের স্বার্থে নিজেকে বদলে ফেলুন। তাতে যদি একটু স্বার্থ ও সম্পদহানি ঘটে তাও সহজে ও সহাস্যে মেনে নিন। শুধু মনে রাখবেন, এই সমাজ-সংসারে আপনি যা বপন করে যাচ্ছেন সেখান থেকে রিটার্ন আসবে। (রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক)

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW