ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান আগের মতো নেই একথা অনেকেই বলে থাকেন। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০,৯৭০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র ১,৭০০ জন। ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১ঃ১৮। ১,৭০০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন আছেন শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে, এ ছাড়া অনেকে ব্যস্ত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কনসালটেন্সি এবং অনেকে ব্যস্ত দলীয় রাজনীতি নিয়ে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক আবার বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়ছেন। শিক্ষকদের ক্লাসে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লাস না নেওয়া যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন। আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্লাসের প্রতি। শিক্ষার্থীদের দাবি, শিডিউল ক্লাস বাতিল করে হলেও শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ক্লাস নেন। আর ক্লাস কম নেওয়ার প্রবণতা সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষকের গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগের ৫২২ জন শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীরা বলছে, শিক্ষকেরা দৈনিক অন্তত একটি ক্লাস ক্যানসেল করেন। গবেষণাপত্রটি ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে’ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, সেমিস্টার/বর্ষে একটি কোর্সের সিলেবাস শেষ করতে যে পরিমাণ ক্লাস নেওয়ার প্রয়োজন, তা নেন না অনেক শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপকেরা ৩৪.১০ শতাংশ, অধ্যাপক ৩৩.৯১ শতাংশ, প্রভাষক ১৭.৮১ শতাংশ ও সহযোগী অধ্যাপকেরা ১৪.১৮ শতাংশ ক্লাস কম নেন। এ ছাড়া সহকারী অধ্যাপকেরা ৩৫.৪৪ শতাংশ ক্লাস বাতিল করেন, অধ্যাপকেরা ২৮.৩৫ শতাংশ, প্রভাষকেরা ১৮.৩৯ শতাংশ আর সবচেয়ে কম ক্লাস বাতিল করেন সহযোগী অধ্যাপকেরা-১৭.৮২ শতাংশ। ক্লাসের সময় নিজের মতো করে পুনর্নির্ধারণ করেন বেশি সহকারী অধ্যাপকেরা-৩৫.০৬ শতাংশ। পুনর্নির্ধারিত ক্লাসের মধ্যে ২০.৯ শতাংশ ক্লাস পরীক্ষার আগমুহূর্তে নিয়ে থাকেন শিক্ষকেরা। এতে করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষার্থীদের। এই সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হয় তাহলে উন্নত শিক্ষা হবে কোথায় থেকে? শিক্ষার্থীরা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পায়। এত কষ্টের ফল যদি অবহেলিত শিক্ষা হয় তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রে জাঁতি কলঙ্কিত। এই সমস্যা সমাধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার নামে অপব্যবহার বন্ধ করুন, দেশকে এগিয়ে নিন।