এডিসের হুঙ্কারে আতঙ্কে রাজধানীবাসী! যথার্থ পদক্ষেপ নিন 

সম্পাদকীয় : | প্রকাশ: ১২ জুন, ২০২৪, ০৬:০৪ এএম

কয়েক বছর ধরে সারা দেশে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে গেল বছর এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেছে দেশবাসী। এক বছরেই সারা দেশে ঝরেছে ১ হাজার ৭০৫ প্রাণ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ জেলায় প্রায় সোয়া তিন লাখ মানুষ। বিগত বছরের ছেয়ে এবছরে এডিসের ঝুঁকি বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রাক-বর্ষা এডিস সার্ভে ২০২৪-এর জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় চলতি বছরের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ১৪.৬৮ শতাংশ বাসাবাড়িতে এডিস মশার শূককীট বা লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর একই সময় এই হার ছিল ৪.০৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছর রাজধানীর বাসাবাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। এই হার ২০-এর ওপরে হলে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। আর হাউস ইনডেক্স ১০ শতাংশের বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি মশার ঘনত্ব পাওয়া যায়। ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ৭৩.৩৩ শতাংশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স ৪৩.৩৩ ছিল ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা (লার্ভার পরের স্তর) পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বহুতল ভবনে ৪২.৩৩ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়িতে ২১.৬ শতাংশ, নির্মীয়মাণ বাড়িতে ২১.৬ শতাংশ এবং সেমিপাকা বাড়িতে ১২.৭৪ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যায়। জরিপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাসাবাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি যে পর্যায়ে পাওয়া গেছে, এতে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। এডিস মশার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় কেন সুফল আসছে না, সেটি আগে জানা দরকার। প্রক্রিয়ায় কি তাহলে কোনো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে? প্রশ্ন থেকেই যায়। এডিসে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, মৃত্যুর প্রধান কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা। এই সময়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে অঙ্গ ড্যামেজ হয়। দেরি করার কারণে দুটি অঙ্গ ড্যামেজ হলে একজন রোগীর ৪০ শতাংশ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তিনটি অঙ্গ ড্যামেজ হলে মৃত্যুঝুঁকি ৭৫ শতাংশ। সবাই যদি এ বিষয়ে সচেতন না হয়, তাহলে এ বছর পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সরকারি ভাবে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জন-সচেতনামূলক বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। এছাড়াও সরকার এমন প্রাণঘাতি রোগ নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW