গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ জলিলকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যানসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত আসামিকে ছিনিয়ে নেয়া, পুলিশের উপর হামলা করে আহত ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে কাপাসিয়া থানায় রাতেই একটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের অধীন উজুলী দিঘীরপাড় এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী পশুর হাটটি নির্ধারিত জায়গার বাইরে আশপাশে এবং কাপাসিয়া-টোক-কিশোরগঞ্জ (ঢাকা কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের) ওপর সম্প্রসারণ করা হয়। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। এমন অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার বিকেলে সেখানে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম লুৎফর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি সেখানে বাজারের নির্ধারিত জায়গার বাইরে বাজার সম্প্রসারণ হয়েছে মর্মে দেখতে পান। ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে সড়ক দখল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারের ইজারাদার আমানুল্লাহকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে আদালতকে সহায়তার জন্য উপস্থিত থানা পুলিশের এএসআই লুৎফুর রহমানসহ অন্যরা দণ্ডিত ইজারাদারকে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে নিয়ে রওনা হলে বাজারে উপস্থিত ইজারাদারের স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দেয়। স্থানীয়রা পুলিশের হেফাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়। এ সময় দায়িত্ব পালনরত পুলিশের এএসআই লুৎফর রহমানসহ কয়েকজনের পোশাক ছিড়ে যায় এবং একপর্যায়ে স্থানীয়রা আমানুল্লাহকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও তে দেখা যায়, উত্তেজিত লোকজন পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে আসামি ছিনিয়ে নিতে টানাটানি করছে। আসামি চোখ রাঙ্গিয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে কথা বলছে। পুলিশের পোশাক ধরে টানাটানি ও ধস্তাধস্তি করছে।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর মিয়া জানান, কাপাসিয়া-টোক-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর পশুরহাট বসানোর কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছিল এবং মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গিয়েছিল। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। পরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তিনি ইজারাদারকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে ওই ইজারাদারকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের উপর হামলা করে তাদের মারধর করে এবং এ সময় পুলিশের পোশাক ছিড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় দন্ডিত আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, পুলিশের বৈধ সরকারী কাজে বাধা প্রদান করাসহ অন্যান্য অভিযোগে কাপাসিয়া থানার টোক তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় টোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ জলিলসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।
তিনি আরো জানান, মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে টোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ জলিল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ও মামলার এজাহার নামীয় ২ নং আসামি ফায়জুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম লুৎফর রহমান বলেন, সড়কে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে জনদূর্ভোগ সৃষ্টির কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইজারাদারকে সাজা দেয়া হয়। পরে দন্ডিত ব্যক্তিতে নিয়ে আসার সময় ইজারাদারের লোকজন পুলিশকে বাধা দেয়। তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ আমানত হোসেন খান বলেন, সড়কে বাজার বসিয়ে যানজট ও জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে সেটি ঠিক হয়নি। একইভাবে সরকারি কাজে বাধা দেয়াও ঠিক হয়নি। যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে, যারা দায়ী তাদের বিচার হোক। তবে, ঘটনার সময় টোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনার একটি ভিডিও তে সেখানে চেয়ারম্যানকে দেখা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, তাছাড়া তার ভাতিজা ইজারাদার আমানুল্লাহর সাথে আবদুল জলিলের সম্পর্ক ভালো না। তাই তিনি আমানুল্লাহর পক্ষে ছিলেন, এটিও সত্য নয়। আমি আশা করবো, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক, কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানীর শিকার না হয়।