উচ্চশিক্ষিত হয়েও রেলপথের ওয়েম্যান!

এফএনএস: : | প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৪, ০৯:০৭ পিএম

বাংলাদেশে বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে এটা সবারি জানা। বেকারত্ব থেকে মুক্তির জন্য তরুণেরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। এটা ভেবে যে, ভবিষ্যতে ভালো একটি চাকরি পাবে পাশাপাশি নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়তে পারবেন। সেই হিসেবে তরুণরা উচ্চশিক্ষায় নিজেকে গড়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পরেও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি মিলছে না! তখনি তরুণ সমাজে ধস নেমে আসে। কেউ চাকরি না পেয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমায় জীবিকার তাগিদে। আবার অনেকে নিজের যোগ্যতাকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নেন স্বল্প শিক্ষার চাকরির কোটায়। সাম্প্রতিক এমনি একটি ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন হাজার হাজার অনার্স-মাস্টার্স পাশ শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখা শেষ করে তাদের প্রত্যাশা ছিল যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি করার। কিন্তু বর্তমানে সরকারি চাকরিটা তো সোনার হরিণের মত! যা চাইলেই পাওয়া যায় না। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা শুনলে যে কারো চক্ষু চড়কগাছ হবে! কারণ, বিষয়টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং উচ্চশিক্ষার বিস্তারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২ হাজার ১৭২ জন প্রার্থীকে ওয়েম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির (১৯তম গ্রেড) এই পদে চাকরি পাওয়া সবাই স্নাতকোত্তর পাশ! অথচ পদের যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল এসএসসি বা সমমান। একজন ওয়েম্যানের কাজ হলো রেললাইন পাহারা দেওয়া, রেললাইনের পাত, ফিশপ্লেট, নাটবল্টু ঠিকঠাক আছে কি না ইত্যাদি দেখাশোনা করা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, যোগ্যতার ফাঁসি গলায় পরে এসএসসি পাশের চাকরিকে যারা বেছে নিয়েছেন কর্মজীবন হিসেবে, শিক্ষাগতভাবে কিংবা সামাজিক বা অর্থনৈতিকভাবে তারা নিজেদের কতটা সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারলেন? হিসাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরি প্রাপ্তিতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা আবেদনকারীর সংখ্যা এবং শূন্য পদের বিপরীতে ১ শতাংশেরও কম! এই ১ শতাংশ সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই একজন বেকার তরুণ দিনরাত পড়াশোনা করেন। বিবিএসের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পরও দেশের ১২ শতাংশ তরুণ বেকার থেকে যাচ্ছেন। সুতরাং, সময় এসেছে দেশের উচ্চশিক্ষিত বেকারদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করার। একজন উচ্চশিক্ষিত তরুণ বা দেশের জনসম্পদকে তার যোগ্যতার চেয়ে অনেক কম যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো চাকরিতে আবদ্ধ করে ফেলা প্রক্ষান্তরে দেশের মেধাকেই জলাঞ্জলি দেওয়া। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং শিক্ষিত বেকারত্বের এমন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ওই সমস্যাটি সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে জাপানিদের মত কারিগরি-টেকনিক্যালি প্রশিক্ষণে তরুণদের আবদ্ধ করতে হবে। এটি বেকার সমস্যা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW