ব্রেন টিউমার কি
মস্তিষ্কের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্রেনে টিউমার বলা হয়। টিউমার ক্ষতিকর (বিনাইন) নাও হতে পারে বা ক্যান্সারপ্রবণ (ম্যালিগন্যান্ট) হতে পারে। মস্তিষ্কের ভেতরে যে ব্রেন টিউমার গঠিত হয় তাকে প্রাথমিক বা প্রাইমারি ব্রেন টিউমার বলা হয়। শরীরের অন্যত্র যদি এমন টিউমার গঠিত হয় যার মূলে আছে ক্যান্সার তা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে গেলে তখন তাকে সেকেন্ডারি বা মেটাস্ট্যাটিক ব্রেন টিউমার বলা হয়। ব্রেন টিউমার-এর চিহ্ন এবং উপসর্গের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন টিউমারের আয়তন, টিউমার আকারে বড় হয়ে ওঠার হার এবং কোনো এলাকায় টিউমারটি হয়েছে সেই অবস্থান। কিছু আদি এবং সাধারণ উপসর্গ হলো মাথাধরার রকমফের, মাঝেমাঝেই এবং অসহ্য মাথা যন্ত্রণা, কথা বলার সমস্যা, এবং ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়া। ব্রেন টিউমার-এর চিকিৎসা নির্ভর করে সেটি কোনো ধরনের টিউমার এবং তার আকার এবং তার অবস্থানের এলাকার ওপর।
ব্রেন টিউমার রোগের প্রাথমিক উপসর্গ বা লক্ষণ-
ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা। তবে মাথাব্যথা মানেই ব্রেন টিউমার নয়। সাধারণত মাথাব্যথার ১ শতাংশেরও কম কারণ হলো ব্রেন টিউমার। ব্রেন টিউমারের জন্য যে মাথাব্যথা হয়, তা সাধারণত খুব ভোরে শুরু হয়। সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি সাধারণত হাতে বা পায়ে বা অন্য কোনো স্থান থেকে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই মাথাব্যথা কিছুতেই যেতে চায় না। মস্তিষ্কের ভেতর পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে টিউমার হলে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। রোগী সামনের অংশটুকু ভালো দেখতে পেলেও দুপাশে দেখতে পান না এবং একপর্যায়ে অন্ধ হয়ে যান। ব্রেনের সামনের অংশে বা ফ্রন্টাল লোবে টিউমার হলে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যায়। তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেন। দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। মটর এরিয়ায় টিউমার হলে যেদিকে টিউমার তার উল্টো দিকে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের খুলির নিচের প্রকোষ্ঠে টিউমার হলে রোগী হাঁটতে গেলে পড়ে যান বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। কানে ঠিকমতো শোনেন না। কথা স্পষ্ট করে বলতে পারেন না। টিউমার বেশি বড় হয়ে গেলে রোগীর হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা-
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন- টিউমারের অবস্থান, আকার, এবং আকার, সার্বিকভাবে রোগীর অবস্থা এবং তার পছন্দের চিকিৎসা। নিচে ব্রেন টিউমার আক্রান্ত রোগীদের কিছু চিকিৎসা প্রক্রিয়ার কথা লেখা হলো-
অস্ত্রোপচার বা সার্জারি : যদি দেখা যায় যে ব্রেন টিউমারটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে অস্ত্রোপচার করা সহজ, তাহলে চিকিৎসক টিউমারটি যতটা সম্ভব বাদ দিয়ে দেবেন। কোনো কোনো সময়ে টিউমারটি ছোট হয় এবং এটিকে মস্তিষ্কের অন্যান্য টিস্যু থেকে সরিয়ে ফেলা সহজ হয়; কাজেই অস্ত্রোপচার করে সেটিকে বাদ দেওয়া সহজ হয়।
টিউমারটির যতটা অংশ বাদ দেওয়া সম্ভব হলো তার ওপর ব্রেন টিউমারের লক্ষণ এবং উপসর্গ কমা নির্ভর করে। মূলত অস্ত্রোপচার বা সার্জারি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রেন টিউমার সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে টিউমারের ধরন এবং চিকিৎসকের দক্ষতার ওপর।
বিকিরণ (রেডিয়েশন) থেরাপি : টিউমার কোষ বিনষ্ট করতে বিকিরণ (রেডিয়েশন) থেরাপিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আলোক রশ্মি যেমন- এক্স-রে বা প্রোটোন ব্যবহার করা হয়। একটি যন্ত্রকে হয় রোগীর শরীরের বাইরে রাখা হয় যাতে বাইরে থেকে আলোকরশ্মির বিকিরণ হয় বা রোগীর শরীরের অভ্যন্তরে ব্রেন টিউমারের পাশে রাখা হয়। টিউমারগুলো যখন মস্তিষ্কের সংবেদনশীল এলাকার কাছে থাকে তখন প্রোটোন থেরাপি, যা বিকিরণের এক নতুন সংস্করণ, বিকিরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিরূপ প্রভাব কমাতে পারে। সমগ্র মস্তিষ্কে বিকিরণের সাহায্যে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়, যা সারা শরীরের অন্য অংশ থেকে ছড়িয়েছে। ক্যান্সারের ফলে যখন একাধিক ব্রেন টিউমার গঠিত হয় তখনও এটি ব্যবহৃত হয়। রোগীর শরীরে কী ধরনের এবং কত ডোজে বিকিরণ দেওয়া হলো, তার ওপর বিকিরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে।
রেডিওসার্জারি : রেডিওসার্জারি পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র এলাকায় টিউমার কোষ বিনষ্ট করার জন্য একাধিক বিকিরণ আলোকরশ্মি ব্যবহার করা হয়। ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওসার্জারিতে অন্যতম প্রযুক্তি হলো গামা নাইফ বা লিনিয়র অ্যাক্সিলারেটর। এই সার্জারিতে একদিনেই চিকিৎসা সম্পন্ন হয় এবং অধিকাংশ রোগী সেদিনই বাড়ি চলে যান।
কেমোথেরাপি : কেমোথেরাপি হচ্ছে ক্যান্সারের অন্যতম চিকিৎসা যেখানে টিউমার কোষ বিনষ্ট করার জন্য মুখে খাওয়ার বড়ি বা পিল দেওয়া হয় বা ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হয়। ব্রেন টিউমারের ধরন এবং অবস্থা বুঝে চিকিৎসায় কেমোথেরাপি সুপারিশ করা হয়। ব্রেন টিউমার নিরাময়ে কেমোথেরাপিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় টেমোজোলোমাইড, যা বড়ি বা পিল হিসাবে দেওয়া হয়।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় টিউমারের দরুন বা অন্য চিকিৎসা চলার কারণে ফুলে গিয়ে থাকলে তা কমাবার জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। ওষুধ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কী ওষুধ কত ডোজে দেওয়া হলো তার ওপর।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে (টার্গেটেড) ড্রাগ থেরাপি : ক্যান্সার কোষগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট অস্বাভাকিতার দিকে নজর রেখে এই চিকিৎসা করা হয়। এই থেরাপিতে যে ওষুধ ব্যবহার হয় তা ক্যান্সার কোষগুলোকে বিনষ্ট করে। বহুবিধ ওষুধ দিয়ে এখন পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এবং সেগুলোর উন্নতি ঘটানো হচ্ছে।
ব্রেন টিউমারে সতর্কতা ও চিকিৎসের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।