কুড়িগ্রামে স্বল্প মেয়াদি বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি 

এফএনএস (মাহফুজ খন্দকার; কুড়িগ্রাম) : : | প্রকাশ: ২২ জুন, ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম

চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৩শ ২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে পাট, আউশ ধান, চিনা, কাউন, আমনের বীজতলা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
তবে শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, শনিবার (২২ জুন) বিকেল ৩ টায় তিস্তা নদীর পানি কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদণ্ডনদীর পানি উল্লেখ যোগ্য হারে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

তবে পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের এখনো নামেনি পানি। এসব এলাকার বাড়ির পাশ দিয়ে পানি অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। তারা নৌকা এবং ভেলা দিয়ে যোগযোগ করছে। এসব চরাঞ্চলের ফসল এক সপ্তাহ থেকে ডুবে রয়েছে পানিতে। ফলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ফান্দের চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বানের পানিতে তার পাট এবং সবজিসহ আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমনের বীজতলা নষ্ট হলে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা।

একই এলাকার দুলু মিয়া বলেন, তার বাড়ি নিচু এলাকায় হওয়ায় পাঁচদিন হলো পানি উঠেছে। এ কয়দিন থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতো রাতদিন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে লাগানো সব সবজির গাছ মরে গেছে। 

রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, দাঁতভাঙ্গা, শৌলমারী ও চরশৌলমারী  ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধান ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বিশষ কর বিপদ পড়ছ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকর। পাশাপাশি গো খাদ্যর তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলের কারণে বারবান্দা, বেড়ামারা, পাখিউড়া, বোয়ালমারী, নতুন শৌলমারী, চরবোয়ালমারী, ডাঙ্গুয়াপাড়া, গুছগ্রাম, ইটালুকান্দা, কাউনিয়ারচর,ছাটকড়াইবাড়ী, ধনতলা, চরধনতলা, শান্তিরচর,ভুদুরচর, নামা বারবান্দা,ইজলামারী, ইছাকুড়ি,পাটাধোয়াপাড়া, চর ইজলামারী, খেওয়ার চর, বকবান্দা, আলগারচর, পোলারচরসহ ৫টি ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হেক্টর পাকাঁ ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

বকবান্দা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাগো পাকা ধান ক্ষেত বৃষ্টির পানিত তলাইয়া (ডুবে) গেছে। ধান কাঁটার কামলা পাওয়া যায় না। কামলার দাম ৮শ থেকে ১ হাজার টাকাতে কাজ করছে না তারা। আমরা গরীব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারাবছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি বন্যায় জেলায় ১৩শ ২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, জেলার সব নদণ্ডনদীর পানি কমছে। দু- একদিনের মধ্যে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এছাড়াও জেলার ৫-৬টি পয়েন্টে প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৪৪ মেট্রিক্টন জিআর চাল ও নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে উপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW