খুলনার পাইকগাছায় চাঁদখালী পূর্ব চর গজালিয়া ৭ মাসের ভ্রুনসহ সুরাইয়া খাতুন (১৯) কে স্বামী মো. তরিকুল ইসলাম (২২) সহ তার পরিবাবের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেছেন। একই গ্রামের মো. রেজাউল করিম ফকিরের ছেলে তরিকুল ইসলাম। দুই পরিবারে সদস্যদের উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে গত ২০২৩ সালে ৩১ জুলাই খুলনা জেলা নোটারি পাবলিকে বিবাহের এফিডেভিটে বিবাহ সম্পন্ন হয়। সুরাইয়া দিনমজুর দরিদ্র পিতা মো. আক্তার আলী গাজী ও রওশনারা বেগমের একমাত্র মেয়ে। বিবাহ পরবর্তী মাদক আসাক্ত তরিকুল যৌতুকের দাবীতে সুরাইয়াকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো। সুরাইয়া পিতা-মাতা মেয়ে সুখের কথা চিন্তা করে ২ লাখ টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে রেখে জামাই-মেয়েকে ভোরন-পোষণ দিতে থাকে। আরো দাবী থাকায় তাদের সুখের কথা চিন্তা করে জামাইকে সুরাইয়া পিতা শেষ সম্বল ভাড়াই চালিত নিজ মোটরসাইকেল ও জমি বিক্রি করে টাকা দিতে চেয়ে ছিলেন। বাড়িতে জায়গা ও ব্যবসার জন্য টাকা দিতে চেয়েও মাদকাসক্ত যৌতুক লোভী পাষন্ড তরিকুল ও তার পরিবারের মন ভরেনি। নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে অনাগত গর্ভের সাত মাসের শিশুসহ সুরাইয়াকে। গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে নির্মাণধীন ঘরের দরজা-জানলা না থাকায় তরিকুল ও তার পরিবাবের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধে হত্যা করে ৮ ফুট উচ্চে ঘরের আড়াই ঝুঁলিয়ে দেয় বলে পাশে রুমে থাকা সুরাইয়া পিতা-মাতা সহ আশেপাশের লোকজন জানান। রাতে মৃত্যুর বিষয় জানাজানি হলে তরিকুল লাশ নিজে নামিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়রা তরিকুলকে আটক করে পুলিশে দেয়। পাইকগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট করে লাশ ময়না তদন্তে পাঠান। এ সময় ওসি লাশ দেখে সুরাইয়াকে হত্যা করা হতে পারে বলে উপস্থিতি শত শত মানুষকে বলেন। এ সময় স্বামী তরিকুলকে আটক করেন। এজাহারনামীয় আসামি তরিকুল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। কিছু দিন পর জেলা আদালত থেকে জামিনে এসে এ ডাবল হত্যা মিশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সহযোগীরা বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে, সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান। তরিকুলের পিতা মো. রেজাউল করিম ফকির মুঠোফোনে তার পুত্রবধূর গর্ভে সন্তান ছিল কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনার সময় বাড়ি ছিলাম না। তরিকুল বিড়ি-সিগারেট খায় বলে তিনি জানান। প্রতিবেশী মো. আবদুর রহমান বলেন, আমার ভাইরা ভায়ের মেয়ে সুরাইয়াকে গর্ভের সাত মাসের শিশু সন্তানসহ হত্যার কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে নেশাগ্রস্থ যৌতুক লোভী তরিকুল পরকীয়া আসাক্ত ছিল। যেীতুকের বাকী ৮ লক্ষ টাকা, গাড়ী বাড়ি দিতে না পারায় তরিকুলের মা জামেলা বেগম (৪০), একই গ্রামে মামা মৃত আবুবকর গাজী পুত্র মজিদ গাজী (৩৮) ও চাচাতো ভাই আজিত গাজী ছেলে রসুল গাজী (২৪) পরিকল্পিতভাবে সুরাইয়াকে হত্যা করেছে। আরো বলেন রসুল প্র্য়া সময় সুরাইয়াকে কুপ্রস্তাব দিতো। হত্যার সাথে সে জড়িত। তাজমিন আক্তার বলেন, আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ আমি লাশকে নিজে হাতে দেখেছি। আমরা ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করার সময় তরিকুল নেশা করে এসে সুরাইয়াকে মারপিট করে পালিয়ে যায়। কাজ থেকে ঘরে ফিরে এসে মেঝেতে সুরাইয়াকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাই। পরে তরিকুল ফিরে এলে সে পর্যায় মাফ চেয়ে পার পেয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে সুরাইয়াকে গর্ভের সন্তান নিয়ে ইট ভাটায় কাজ করতে বাধ্য করা সহ যৌতুক জন্য চাপ দিতে থাকে। পিতা মো. আক্তার আলী গাজী ও মাতা রওশানারা বেগম বলেন, যৌতুকের আরো ৮ লাখ টাকা দিতে না পারায় ওরা আমাদের মেয়ে সুরাইয়াকে হত্যা করেছে। সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোছা. এস্নেয়ারা বেগম সুরাইয়া গর্ভের সন্তান ছিল জানিয়ে বলেন, সন্তানের কথা চিন্তা করে কোন মা আত্মহত্যা করতে পারে না। ৮নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম সরদার, সুরাইয়া গর্ভে সন্তানের কথা স্বীকার করে বলেন, লাশের গায়ে পুলিশ মারপিটের চিহ্ন দেখতে পায়। দন্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে বা প্ররোচনা দান করবে, সে ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হবে। এ ঘটনা পাইকগাছা সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা নম্বর জিআর ৪২/২৪, যা চলমান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কেএম সামাদ্দ হোসেন বলেন, পিএমজি রিপোর্টের জন্য আবেদন করেছি। তিন মাস হয়ে গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট (পিএমজি) পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।