পুঠিয়ায় আশ্রয়ণের মানুষ কষ্টে রয়েছেন 

এফএনএস (কে এম রেজা; পুঠিয়া, রাজশাহী) :  : | প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২৪, ০৪:৩১ এএম

রাজশাহী পুঠিয়ায় মুসা খাঁ আশ্্রয়ণে ১১৭টি ঘরের মানুষ ভীষণ কষ্টের ভেতর বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে। কেউ শতচেষ্টা করেও একটি ঘর পাচ্ছেন না। আবার যারা অনিয়ম করে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে তারা আশ্রয়ণের বসবাস করছে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ৫শত ৯২টি ঘর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মণ করা হয়েছে। মুসা খাঁ নদীর নামকরণ অনুযায়ী এই আশ্রয়ণের নাম রাখা হয়েছে, মুসা খাঁ আশ্রয়ণ। এখানে ১১৭টি ছিন্নমূল মানুষের বসবাস করছেন। আশ্রয়ণের বসবাসকারি বলছেন, সাবেক ইউএনও নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ এবং বর্তমান উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থপরতার কারণে আশ্রয়ণে বিভিন্ন এলাকা হতে মানুষ এসে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে। কিন্তু তারা বর্তমানে আশ্রয়ণে বসবাস করছে না। যাদের প্রকৃতপক্ষে ঘরের প্রয়োজন রয়েছে তারা আবার ঘর পায়নি। মুসা খাঁয় যারা ঘর বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন না তারা হলেন, চন্দন কুমার দাশ, হাবিবুর রহমান, মালেক হোসেন, আবদুল সাত্তারসহ ১০ জন রয়েছেন বলে আশ্রয়ণের বসবাসকারিরা অভিযোগ তুলছেন। আশ্রয়ণে এমন ব্যক্তিদের ঘর দেওয়া হয়েছে। তারা বরাদ্দ নেওয়ার পর একদিনও ঘরে বসবাস করিনি। বরাদ্দকৃত ঘর তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলার অনেক ছিন্নমূল ব্যক্তি আবার শতচেষ্টা করেও ঘর পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন,আমাদের সুপারিশে বেশিভাগ ঘর বরাদ্দ হয়নি। ইউএনও এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের ইচ্ছামতো ঘর বরাদ্দ হয়েছে। আশ্রয়ণ নির্মাণ করার সময়ে অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তখন হাত পা বাধা ছিল। কোনো কিছু করার উপায় ছিল না। কারণ দুইজন কর্মকর্তার ওপর সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব সরকার দিয়ে ছিল। তরে পুঠিয়া উপজেলার আশ্রয়ণের প্রকল্পগুলি টাকার যে নয়ছয় হয়ে তা এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। সবগুলি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। এগুলো সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। সংশ্লষ্টি কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য বর্তমানে তালুকদার আশ্রয়ণসহ কয়েকটি আশ্রয়ণে সবচেয়ে ভয়ানক হয়ে দেখা দিয়েছে। তা হলো মাদক এবং অসামাজিক কার্যকলাপ। আশ্রয়ণের বসবাসকারিরা বলছেন, মুসা খাঁ আশ্রয়ণে ১১৭টি ঘরের ভেতর ১০টিতে কেউ বসবাস করছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে অন্য আশ্রয়ণগুলিতে অনেকেই বসবাস করছে না। অনেক আশ্রয়ণে ঘরে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বসবসাস না করায় ঘরবাড়ি নষ্ট  হয়ে যাচ্ছে। মায়া রানী বয়স ৭০ বছর। তার স্বামী নেই। দুই সন্তান ঢাকা থাকেন। দুই সন্তান মুসলিম হয়ে যাওয়ায় মায়ের সঙ্গে তারা কোনো রকম যোগাযোগ রাখেন না। তার  ভিক্ষা করে জীবন চলে। সে আশ্রয়ণে ঘর পায়নি। সে শতচেষ্টা করেও একটি ঘর পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণের পার্শ্বে নিজে একটি ছোট্র কুঁড়েঘর ওঠায়ে কষ্টে বসবাস করছেন। আশায় রয়েছেন কবে একটি ঘর পাবে। নিভা রানী বলেন, আমার স্বামীর নামে একটি ঘর বরাদ্দ হয়ে। কিন্তু ছেলে বউ নাতি নিয়ে কষ্টে ভেতর বসবাস করতে হচ্ছে। মায়ার মতো অনেক মানুষের ঘরের প্রয়োজ আছে কিন্তু ঘর নতুনভাবে বরাদ্দ আর হচ্ছে না। মুসা খাঁ আশ্রয়ণে কোনো যাতায়াতের সুব্যবস্থা নেই। তারপর ঘরের সামনে কাদা পানি জমে রয়েছে। ছিন্নমূল মানুষগুলো অভিযোগ পাশেই সাবেক ইউএনও এলাকার বংসের নামে গড়া তালুকদার পাড়ায় যাতায়াতের জন্য ইট বিছানো তিনটি রাস্তা রয়েছে। তাদের ঘরবাড়ির সামনে ইট বিছানো রয়েছে যেন কাদা পানি না জমে। আর আমরা মুসা খাঁয় যারা বসবাস করি তাদের বাড়িঘরের সামনে কাদা বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। আমাদের প্রতি সরকারের মানুষগুলি অন্যায় করছে। তাহলে এই আশ্রয়ণের রাস্তার বরাদ্দের টাকা কোথায় গেলো। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝর যুগান্তরকে বলেন, মুসা খাঁ আশ্রয়ণে উপজেলা এলজিইডি হতে আগামীতে যাতায়াতের মাটির যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে তা পাকা করে দেওয়া হবে। যারা আশ্রয়ণে ঘর নিয়ে বসবাস করছে না। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করার নিদের্শ দিয়েছি। যাচাই-বাছাই হওয়ার পর যাদের ঘরের প্রয়োজন নেই তাদের ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।  

 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW