নিরাপদ খাদ্য আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন

এফএনএস: : | প্রকাশ: ১৫ জুলাই, ২০২৪, ০৪:২২ এএম

খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ সেই খাবার নিয়েই চলছে প্রতিনিয়ত ভেজালের ছড়াছড়ি। যে খাবার মানুষ গ্রহণ করে জীবন বাঁচানোর জন্য, তা- এখন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে জীবনের জন্য। বর্তমানে এমন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে বাজারে এমন কোনো খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যাবে না যেগুলোতে ভেজালের সংমিশ্রণ নেই। যেদিকে তাকানো যায় যেদিকেই শুধু ভেজালের ছড়াছড়ি। খাদ্যসামগ্রীতে যেসব কেমিক্যাল মিশিয়ে খাদ্যের মান নিম্নমুখী করা হয় সেগুলোর মধ্যে ফরমালিন বহুল পরিচিত। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ টাটকা দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ফরমালিনের ব্যবহার করা হয়। মাছ, আপেল, আঙ্গুর, চিনি, মিষ্টি ইত্যাদিতে ফরমালিন মেশানো, মাছের ফুলকাতে রঙ মেশানো, মুড়িতে ইউরিয়া, চানাচুরে পোড়া মবিল মেশানো, আখের গুড়ে হাইড্রোজ, কলাতে কৃত্রিম হরমোন, বিভিন্ন ফলে কার্বাইড ফরমালিন, দইয়ে টিস্যু পেপার, শুঁটকিতে কীটনাশক, আম, পেঁপে, টমেটো, আনারস ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশিয়ে সব ধরনের খাবারকে অনিরাপদ করে তুলেছে কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী। একদল অসাধু-বিবেকহীন ব্যবসায়ী আড়তদারদের জন্য প্রতিনিয়ত ভেজাল খাবার খেয়ে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। শিশু বৃদ্ধদের বেলায় এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকি  শিশুখাদ্য প্রাণ রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধেও মিলেছে ভেজালের প্রমাণ। টেক্সটাইল মিলের কাপড়ের রং বিভিন্ন খাবার পানীয়ের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। তবে লিভার, হৃৎপি-, কিডনি, ফুসফুস, ত্বক অস্থিমজ্জার বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করে প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্যে বিভিন্ন ভেজালের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ সময় এসবের শেষ পরিণতি মৃত্যু। ছাড়া ধরনের খাবারে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা, রক্তস্বল্পতা, গর্ভপাতসহ বিকলাঙ্গ শিশুরও জন্ম হতে পারে। বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি। তাই কঠোর ভেজালমুক্ত খাদ্য নীতিমালা, প্রশাসনিক বিচারিক কার্যক্রমের পাশাপাশি  জনসচেতনতা, সুশিক্ষা, খাদ্যদ্রব্যের নিরাপদ সংরক্ষণ সুষম বণ্টন খাদ্যে ভেজাল রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন রয়েছে, কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআইসহ অনেক সংস্থা রয়েছে, কিন্তু তাদের নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। তাই আশা করি, সরকার ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করবে। তাছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে নকল ভেজালসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ধারায় অভিযান জোরদার করে জরিমানা কার্যক্রম আরও কঠোর করতে হবে।

 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW