প্রতি বর্ষাতেই ঢাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। নাগরিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অপর্যাপ্ত নিষ্কাশনব্যবস্থার কারণে পানি নামতে দেরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো শহরের মোট আয়তনের ১২ শতাংশের মতো জলাধার থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ২ শতাংশ। তাও ভরাট হওয়ার পথে। রাজধানীর অনেক খালের এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে অবস্থা এমন হয়েছে যে অতিবৃষ্টির পানি সেগুলো দিয়ে নামতে পারে না। নাগরিক অসচেতনতা ও অনিয়ন্ত্রিত পলিথিন দূষণের কারণে ভূগর্ভস্থ ড্রেনের মুখগুলো পলিথিন ও আবর্জনায় ঢেকে যায়। ভূগর্ভস্থ ড্রেনে পানি নামতে পারে না কিংবা নামতে দেরি হয়। আবার যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী বা বালু-মাটি এমনভাবে রাখা হয় সেগুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে ড্রেনে গিয়ে পড়ে এবং ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। সিটি করপোরেশনগুলোর বক্তব্য, খালগুলো পরিষ্কার করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান কী? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিকট অতীতে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের অদূরদর্শিতা, অপরিকল্পনা, ভুল পরিকল্পনা এবং স্বার্থপরতা ঢাকা মহানগরের এমন দুরবস্থার জন্য অনেকটাই দায়ী। অনেকগুলো খাল ভরাট করে রাস্তা বানানো হয়েছে। ভাবা হয়নি নগরের পানি নামবে কিভাবে? কিছু এলাকায় খাল ভরাট করে বিপুল ব্যয়ে বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। বানানো শেষ হওয়ার আগেই সেগুলো ময়লায় ঠেসে গেছে। সেগুলো দিয়েও এখন পানি নামছে না। বরং বক্স কালভার্টের বাইরে থাকা খালের অংশ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। আর লোভী মানুষজন খাল ভরাট করে বহুতল ভবনও বানিয়েছে। কোনো রকমে অস্তিত্ব ধরে রেখেছে এমন অনেক খালের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ৫০ ফুট প্রস্থের খাল ১০-১৫ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক জায়গায় এমন অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে যে সেসব জায়গায় পানি নামার মতো নালা তৈরি করারও সুযোগ নেই। নাগরিকদের পক্ষ থেকে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি দীর্ঘদিনের। উচ্চ আদালত এ ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে ছিল খাল ও জলাধারগুলো পুনরুদ্ধার, নাব্য করা, সীমানা পিলার করা, ওয়াকওয়ে করা ইত্যাদি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের গৃহীত পদক্ষেপ খুবই হতাশাজনক। আমরা চাই, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরুদ্ধারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে পলিথিন দূষণ রোধে নাগরিকদের সচেতন করার পদক্ষেপও নিতে হবে।