রাজশাহীর তানোর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (টিসিএফ) মলিউজ্জামান সজিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ মতাদর্শী এই কর্মকর্তার দাপটে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এখানে কাজে ক্রটি থাক বা নাই থাক প্রতিটি কাজে তাকে আর্থিক সুবিধা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ডিও লেটার আটকিয়ে টাকা আদায় নিয়মে পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালকল মালিক জানান, গত বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহে খাদ্য কর্মকর্তা বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে বন্ধ চালকল চুক্তিবদ্ধ করেছেন। এবার নতুন করে গত ২৭ অক্টোবর ওএমএস ডিলার নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কেউ ডিলার নিয়োগ পেতে আবেদনপত্র নিয়ে অফিসে গেলে ভুল ভ্রান্তির কথা বলে আর্থিক সুবিধা দাবি করা হচ্ছে। তবে, যারা আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে সব ঠিক আছে বলে অন্যান্যের তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান করা হলেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এমনকি খাদ্য কর্মকর্তার মদদে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কমিশনের ভিত্তিতে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই কারসাজি করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও নিম্নমাণের চাল সংগ্রহ, রাঁতের আঁধারে গুদাম থেকে চিকন চাল বের করে মোটা চাল ঢোকানো ও মিলারদের ক্যাসিংয়ের জন্য চিকন ধান দিয়ে মোটা চাল নেয়া ইত্যাদি নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এই আলোচিত খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তানোর সরকারি খাদ্যগুদামে যে চাল মজুদ রয়েছে সেই ধানের চাষ উপজেলায় হয় না। তাহলে এসব চাল এল কোথা থেকে। আবার কৃষকের কাছে থেকে কেনা ধানের চাল গেলো কোথায় ? মিলারদের ক্যাসিংয়ে দেয়া সরু ধানের চাল কোথায়? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে উপজেলাজুড়ে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, শর্ত পূরণে চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হলেও শুধু বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ও বৈধ লাইসেন্স দেখিয়ে খাদ্য কর্মকর্তার নেপথ্যে মদদে বন্ধ মিল থেকে সরকারের খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করে আসছে একশ্রেণির কথিত মিলার। অথচ সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত চাল সংগ্রহের চুক্তির মডেল অনুসরণ করে চাল সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন উৎপাদনে নিয়োজিত বৈধ চালকল লাইসেন্সধারী মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করতে হবে। যেসব মিলের বয়লার, চিমনি নেই সেসব মিলের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করা যাবে না। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিলারদের আবেদনপত্রসহ চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব যাচাই-বাচাই শেষে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রেরণ করবেন। যাচাই-বাচাই শেষে সব প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী বৈধ চালকল মালিকরা সরকারের খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিলার বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের লাইসেন্সগুলো টিকানোর জন্যই মূলত আমরা বরাদ্দ নেই। পরবর্তীতে আটোমিলের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের গুদামে চাল সরবরাহ করে থাকি এটা সত্যি।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (টিসিএফ) মলিউজ্জামান সজিব এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মূলত লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ বিলের কপি দেখেই এসব বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কিন্তু পরিপত্র অনুযায়ী বন্ধ মিল থেকে চাল সংগ্রহ করা যাবে না। তবে, যখন উপর মহল থেকে নির্দেশনা আসে তখন কিছুর করার থাকে না বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে পদাধিকার বলে ধান ও চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ওএমএস ডিলার নিয়োগের আবেদন সংগ্রহে টিসিএফ দ্বারা কোন অনিয়ম হলে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানান ইউএনও।