রাজশাহী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি নিয়ে নানা মুখি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। চেম্বারের যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলেও একটি মহল পানি ঘোলা করে সেখানে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
দাবি তোলা হয়েছে চেম্বার ভেঙ্গে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচানের। এমনকি নির্বাচিত কমিটিকে অনির্বাচিত বলেও আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। মুলত আওয়ামীপন্থী হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের ব্যবসায়ী নেতা জাহির করে চেম্বারকে নিয়ে নানামুখি অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারী মাসে দুই বছরের জন্য রাজশাহী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালন পর্ষদ গঠিত হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন মাসুদুর রহমান রিংকু। সে হিসাবে বর্তমান পর্ষদের এক বছর এখনো পুর্ন হয়নি। এরইমধ্যে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। এই পতনের মধ্য দিয়ে চেম্বারের আওয়ামীপন্থী পরিচালকরা পালিয়ে যান। চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের আওয়ামীপন্থী পরিচালকরা পালিয়ে গেলেও বাকিদের নিয়ে সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারে কাছে নিকট স্মারকলিপি দেয়া হয়। গত ৮ অক্টোবর একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর পুনরায় একই দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো চেম্বার ভেঙ্গে দেয়া, পুনরায় নির্বাচন চাওয়া ব্যক্তিরা কারা ?
খোজ নিয়ে জানা গেছে, চেম্বার নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, বারবার স্মারকলিপি প্রদান, চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি তোলা মূল ব্যক্তি ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে পরিচিত সেকেন্দার আলী। তার নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। যদিও সেকেন্দার আলী চেম্বারের সদস্যও না। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, সেকেন্দার আলী কথিত ব্যবসায়ী নেতা। তিনি আওয়ামী ঘরোনার লোক। তিনি আওয়ামীপন্থী সহযোগিদের নিয়ে চেম্বারের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। সেকেন্দারের সাথে রয়েছেন ফরিদ উদ্দিনসহ আওয়ামী পন্থী আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে ২৬ মে চেম্বার থেকে সেকেন্দার আলীকে শোকজ করা হয়েছিল। চেম্বারকে না জানিয়ে কালেক্টর মাঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নামে জুয়া, রাফেল ড্র, হাউজি বসানোর অভিযোগে তৎকালিন চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি তাকে শোকজ করেছিলেন। মেলার নামে জুয়া অবৈধ কার্যকলাপ চলার কারণে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তার কাছে জবাব চাওয়া হয়। তিনি শোকজের জবাবে পরিচালনা পর্ষদকে জানায়, র্যাফেল ড্র ও হাউজির বিষয়টি চেম্বারকে না জানানোর বিশেষ কিছু কারণ ছিল। পরে ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই পরিচালনা পর্ষদের ৫ম সভায় তিনি এ ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন সেকেন্দার আলী। এই সভায় সেকেন্দারের সহযোগি ফরিদ উদ্দিন বলেছিলেন, বাণিজ্য মেলা থেকে সেকেন্দার আলীকে অব্যহতি দেয়া উচিৎ। পরিচালনা পর্ষদ সেকেন্দার আলীকে স্বেচ্ছায় বাণিজ্য মেলা থেকে সরে যাওয়ার আহবান জানায়।
জানা গেছে, বাণিজ্য মেলার উপণ্ডকমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন সেকেন্দার আলী। তিনি মেলা পরিচালনার কো- চেয়ারম্যান হলেও তার মাথার উপর ছিল রাসিকের সাবেক মেয়র লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ শীর্ষ নেতারা। তাদের ক্ষমতা বলে সেকেন্দার আলী কালেক্টর মাঠে মেলায় র্যাফেল ড্র, হাউজি ও জুয়ার আসর বসিয়ে টাকা ভাগবাটোয়া করে নিতেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়জুড়েই রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও তিনি ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে পরিচিত। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শুধু মাত্র সাবেক রাসিক মেয়র লিটনের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ বড় বড় ব্যবসায়ী আছে তারা কোনো পদ পদবি পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, গত জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিপক্ষে ছিলেন সেকেন্দার আলী। তিনি আন্দোলনের পুরো সময়জুড়েই আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন। সাবেক রাসিক মেয়র লিটন যেভাবে চালিয়েছেন তিনিও ঠিক সেভাবেই চলেছেন। শিক্ষার্থীরা শেষ মহুর্তে কমপ্লিটশার্টডাউন কর্মসূচি দেয়ার পর সেকেন্দার আলীর নিদের্শে নগরীর মার্কেট খোলা রাখা হয়। আন্দোলন চলাকালে সাবেক রাসিক মেয়র লিটন ব্যবসায়ীদের ডেকে সভা করেন। সেই সভায় সেকেন্দার আলী উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় পুরো দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেকেন্দার আলীকে। যদিও সেকেন্দার আলী ওই সভায় উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ী কমপ্লিটশার্টডাউনের দিন দোকানপাট বন্ধ রাখলেও সেকেন্দারের সেল্টারে আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে ব্যবসা করেছেন।
এব্যাপারে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো মিথ্যে অভিযোগ। আমি ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকি। সেই জায়গা থেকে কিছু ব্যবসায়ীদের নিয়ে চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি করা হয়েছে। আগে কেনো চেম্বারের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেননি, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন আগে অভিযোগ করার পরিবেশ ছিল না।
এব্যাপারে চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র কাজে দিবে না। কারণ যারা চেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, ষড়যন্ত্র করছেন তারা কেউ চেম্বারের সদস্যই নয়। যারা চেম্বারের সদস্যই না তাদের অভিযোগের ভিত্তি কতটুকু এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।