নারী ফুটবলার লক্ষ্মীছড়ির মনিকা চাকমা 

এফএনএস (মোবারক হোসেন; লক্ষ্মীছড়ি, খাগড়াছড়ি) : : | প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম

আলোচিত এক বাংলাদেশ নারী ফুটবলারের নাম। যার বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সুমন্ত পাড়ায়। দ্বিতীয়মবারের মতো সাফ ফুটবলের শিরোপা অর্জন যা গোটা দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই সাফল্যে আনন্দে ভাসছে দেশ।  সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বিরল অবদান রাখলো মনিকা : ২০২২ সালের পর ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল বাংলাদেশের মেয়েদের দল। নেপালকে ২-১ গোলে পরাস্ত করে তারা দ্বিতীয়বার ট্রফি ঘরে তুলল। ২ বছর আগে তারা নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল। ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের প্রথম গোল পায় বিরতির পর। মণিকা চাকমা বক্সের ভিতর থেকে প্লেসিংয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। প্রথম ম্যাচে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করে। এরপর ভারতকে ৩-১ গোলে হারায় তারা। সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে হারায় তারা। এরপর মনে হয়েছিল ফাইনালটা বাংলাদেশের মেয়েদের হবে। আর সেটাই হলো। এর আগে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের বছাইপর্বে মিয়ানমারকে ১-০ গোলে হারিয়ে এএফসি‘র চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। কঠিন প্রতিপক্ষ মিয়ানমারকে একমাত্র মনিকা গোলেই হারানো সম্ভব হয়। দুর্দান্ত গোল করে মনিকা ফের আলোচনায় চলে আসেন। 

মনিকা চাকমার ওঠে আসার গল্প : মনিকা চাকমার ওঠে আসার গল্পটা তেমন সহজ ছিলো না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিনে পরিচালিত গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে লক্ষ্মীছড়ির মরাচেগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টীমের হয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়ে জেলা পর্যায় খেলেন মনিকা চাকমা। পরে জাতীয় পর্যায় খেলার ডাক পান অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। এ দলটি ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এএফসির টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান ফেয়ার প্লে ট্রফি জিতে। ওই আসরে মনিকা গোল করেছিল তিনটি। মনিকা চাকমা বাংলাদেশের জাতীয় দলের নারী ফুটবল খেলোয়াড়। সে খেলে মধ্যমাঠে। ২০১৯ সালে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে গোল করে পরিচিতি পান। ফিফা তার এ গোলকে ‘জাদুকরী গোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নাম প্রচার পায় “ম্যাজিকেল মিনাকা”।

ফুটবল খেলা পছন্দ করতেন না তাঁর বাবা : ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া মনিকা চাকমা এখন সকলের পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি মনিকার বাবার পছন্দ ছিলো না। তাই বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে ফুটবল খেলতেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন বড় বোন অনিকা চাকমা। মেয়ে হয়ে খেলবে ফুটবল? ফুটবল তো ছেলেদের খেলা। হয়তো এমনটা ধারণা পোষন করেছিলো মনিকার বাবা মা। তাই খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের মনিকা ফুটবলার হয়ে উঠার গল্পটা মসৃণ ছিল না। বাবা মা কখনোই ভাবেননি একদিন মনিকাই বাংলাদেশ মাতাবেন। বাব মা‘র পাঁচ মেয়ের মতো সবার ছোট মেয়ে মনিকা। হয়ত সেও লেখা পড়া শেষ করে সংসারী হয়ে যেতো। কিন্তু রক্তে মিশে গেয়ে ফুটবল তাই সকল বাঁধা পেরিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ফুটবল খেলতেন দেশের আলোচিত এই মনিকা। 

যে গ্রাম থেকে ওঠে এল মনিকা : লক্ষ্মীছড়ির গর্ব দেশের আলোচিত এ নারী ফুটবলার মনিকা চাকমার বাড়ি উপজেলা সদর থেকে ৭কি: মি: দুরে সুমন্ত পাড়া এলাকায়। বাবা পেশায় কৃষক। আর মা রবিমালা গৃহিনী। বাড়িতে যাওয়ার ভালো রাস্তা নেই। একটি ছড়া পার হয়ে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে সেটা পার হওয়া সম্ভব না। শিক্ষক বীরসেন চাকমা ও গোপাল দে ছিল মনিকা চাকমা ওঠে আসার পেছনের কারিগড়। মনিকা চাকমার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা বলেন, আমি আমার মেয়ের সাফল্যে আমি গর্বিত। মনিকা শুধু এলাকারই গৌরব উজ্জ্বল করেনি সারা দেশের গৌরব উজ্জ্বল করেছে। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা বলেন, অভিনন্দন মনিকা চাকমাকে, অভিনন্দন বাংলাদেশ টীমকে। মনিকা আমাদের লক্ষ্মীছড়ির গর্ব।  

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW