দেশে সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে ছিল এই ভেবে যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে। সবাই সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ২মাস ফের হলেও জনগণের মাঝে এখনও স্বস্তি দেখা মেলেনি। এর মূল কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তাহলে কী অন্তর্বর্তী সরকারও জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরাতে ব্যর্থ? এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এখন সাধারণ মানুষের মনে। সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় তা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়ে উঠেনি! এর মূল কারণ হলো অসাধু চক্র। সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, ২০ দিনে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা লুট করেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এর একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০.৫৮ টাকায় বিক্রি করতে পারবে, যা ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু যাদের সঙ্গে নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হলো, তারা কেউ সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করেনি। করপোরেট উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১১.১ টাকায় বিক্রির কথা স্বীকার করলেও তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছে ১১.৮০ থেকে ১২.৫০ টাকায়। যার ফলে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। প্রতিটি ডিমে দুই টাকা বেশি নিলে প্রতিদিন চার কোটি ডিমে আট কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ টাকায়। লেয়ার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতিদিন ৩০ লাখ সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিটি বাচ্চাই যদি ২০ টাকা বেশি ধরা হয়, তাহলে প্রতিদিন ছয় কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে ১২০ কোটি টাকা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। বাজারে ডিম ও মুরগির চাহিদার ৮০ শতাংশই উৎপাদন করা উদ্যোক্তা প্রান্তিক খামারি ও ভোক্তারা এসব করপোরেট কম্পানির কাছে অসহায়। দাম বৃদ্ধিতে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা। এই চক্র বারবার বাজারে কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। এ কারণে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। তাই এখনি উপযুক্ত সময় এদের কঠোর আইনের আওতায় আনার। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এসব অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।