মালয়েশিয়া শহরে ছিন্নমুল জীবনে আগৈলঝাড়ার সান্টু মিয়া

এফএনএস (এস এম ওমর আলী সানি; আগৈলঝাড়া, বরিশাল) : : | প্রকাশ: ২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

*৩১ বছর ধরে মালয়েশিয়া।
* আইনি জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না।
*শতবর্ষী মা- শেষ বার ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য
*সৃষ্টিকর্তার কাছে দু-হাত তুলে চোখের জল ফেলছেন।

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে সান্টু মিয়া ৩১ বছর পূর্বে  কর্মসংস্থানের জন্য মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। মালয়েশিয়া যাবারপরে ৪ থেতে ৫ বছর পরিবারে সাথে যোগাযোগ ছিলো। তার পরে পরিবারে সাথে যোগাযোগ বন্ধাহয়েযায়। মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরে বুকিবিন্তান এলাকায় সান্টু মিয়াকে অর্ধ উম্মাদ অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে দেখতে পেয়ে বাংলাদেশের আগৈলঝাড়ার শাহিন ফকির ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দিলে তোলপাড় শুরু হয় দেশে থাকার তার পরিবারের লোকজনের মাঝে। সে এখন মালেশিয়াতে ছিন্নমুল জীবনে অর্ধ উম্লমাদের মত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নীচে জীবন যাপন করছেন  বলে জানাগেছে।সামাজিক যোযোগে ভিডিও দেখে গ্রামের বাড়িতে শতবর্ষী বৃদ্ধা মা মেরেজান বেগম অশ্রুসজল চোখে  বলেন ছেলেকে মৃতুর আগে একবার কাছে দেখেযেতে চাই। ৩১ বছর পূর্বে মালয়েশিয়া যাওয়া সান্টু মিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। 
প্রবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের আবুল হোসেন মিয়ার পাঁচঁ ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সান্টু তৃতীয় সন্তান। পিতা আবুল হোসেন মিয়া(৬৫) ও ছোট বোন ববিতা আক্তার(১৪)২০০৩ সালে ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ ডুবিতে মৃত্যু হয়েছিল। অন্য অন্য ভাইয়েরা পিতার মৃত্যুর পরে বাগধা গ্রাম থেকে খাজুরিয়া গ্রামে বর্তমানে বসবাস করছে। 

সান্টু মিয়া সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯৯৩ সালে একটি কোম্পানীতে ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যান। কোম্পানীতে কাজ করে গ্রামের বাড়িতে অর্থ প্রেরনসহ নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও কিছুদিন পর মালয়েশিয়ার নাগরিক মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি পূত্র সন্তান জম্ম নেয়। এর কিছুদিন পরে স্ত্রীর ভাইয়েরা সান্টু মিয়াকে নেশা খাওয়ার অভিযোগে বেদম মারধর করে বাসা থেকে তারিয়ে দেয়।
সান্টু মিয়া প্রথম যে কোম্পানীর ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন ওই কোস্পানীর কাছে তার পার্সপোর্ট জমা থাকায় কারনে কোন স্থানে নতুন করে কাজে যোগদান করতে পারেনি। এরপরেই সান্টু মিয়ার শুরু হয় ভব ঘুরে জীবন যাপন। একারনে একাধিবার মালয়েশিয়াতে আইশৃংখলা বাহীনির হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থাকার কারনে অন্য কয়েকটি দেশের ভাষাও জানতেন তিনি। তখন ওই দেশে তার নামে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ইউএন কার্ড করেছিলেন। একারনে একবার দেশে আসার জন্য বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় ইউএন কার্ডে তার নাম থাকার সে দেশে আসতে পারেনি। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরে বুকিবিন্তান এলাকায় সান্টু মিয়াকে অর্ধ উম্মাত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে দেখতে পেয়ে বাংলাদেশের শাহিন ফকির মঙ্গলবার ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দিলে তোলপাড় শুরু হয় দেশে থাকার তার পরিবারের লোকজনের মাঝে। সান্টু মিয়ার বড় ভাই সেলিম মিয়া মালয়েশিয়ার জোহরবারু এলাকায় থাকা তার নিকট আত্মীয় কাইয়ুম মিয়া ও শামীম মিয়া বুকিবিন্তান, পাশর্^বর্তী পোটারায়া, মাইডিং মার্কেট, চায়না টাউনসহ বিভিন্ন এলাকায় সান্টু মিয়াকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সারাদিন খুঁজেও পাননি। 
সান্টু মিয়ার গ্রামের বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামে গেলে তার বৃদ্ধা মা মেরেজান বেগম বলেন,  আমার মৃত্যুর আগে আমার ছেলে  সান্টুকে এক নজর দেখতে চাই। ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী করছি।   
সান্টু মিয়ার বড় ভাই সেলিম মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাই সান্টু মিয়া ৩১ বছর পূর্বে মালয়েশিয়া যায়। পার্সপোর্ট না থাকা ও রেহিঙ্গা ইউএন কার্ড থাকার কারনে আমার ছোট ভাই সান্টু মিয়া দেশে আসতে পারছে না। আমরা সামাজিক যোগাযোগে দেখতে পেয়ে। আমাদের এলাকার আমবৌলা গ্রামের সজীব মৃধা ও সাতলা গ্রামের নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম তারা মালেশিয়াতে থাকে তাদের কাছে সান্টু মিয়ার নামের আগৈলঝাড়া ইউএনও’র প্রত্যায়নপত্র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পার্সপোর্টের ফটো কপি পাঠিয়েছি সান্টু মিয়াকে খোজার জন্য ।
এব্যাপারে বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্রি সাংবাদিকদের বলেন, সান্টুকে মালয়েশিয়া থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার পরিবার আমার সহযোগীতা চাইলে সকল ধরনের সহযোগীতা করা হবে।  
মালয়েশিয়া থাকা শাহিন ফকির ফোনে বলেন,  মালয়েশিরার বুকিবিন্তান এলাকায় সান্টু মিয়াকে অর্ধ উম্মাদ অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে দেখতে পেয়ে তার পরিচয় পেয়ে  তার ভিডিও ধারন করে বাংলাদেশের এক গনমাধ্যম কর্মীকে পাঠাই। স্যোশাল মিডিয়ায়  ভিডিওটি ভাইরাল হলে সান্টুর পরিবার থেকে তাকে খোঁজার জন্য সান্টুর নিকট আত্বীয় কাইয়ুম মিয়া  ও  শামীম মিয়া আমার কাছে আসলে তিনজন মিলে খুঁজে এখনও সান্টুকে পাওয়া যায়নি।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW