ক্ষমতাতেও যেন ক্ষমতাহীন থাকি!

রাজু আহমেদ  : | প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম : | আপডেট: ৬ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম

ক্ষমতার ছড়ি কিংবা পদ ও পদবির দম্ভ যেন অবিবেচক না বানায়। পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়। সাধারণ মানুষের কাতারে যেদিন দাঁড়াতে হবে সেদিন যেন মানুষ ঘৃণা ভরে না তাকায়। ক্ষমতা, চেয়ার, কলম কিংবা যোগ্যতা যেন কাউকে দাম্ভিক না বানায়। সবকিছুকে দায়িত্ব ভেবে যেন কৃতজ্ঞ থাকি। আমি অমুক, আমি তমুকের তমুক- এই হাম্বরা যদি অমানুষ বানিয়ে ফেলে তবে সারাজীবন মানুষ হতে না পারার ব্যর্থতায় খেসারত দিতে হবে। প্রত্যেকের অবসর আমাদেরকে শেখায়- বিনীত হও। চেয়ার পেয়ে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, মানুষকে হয়রানি করেছে, ঘুষ-দুর্নীতিতে মেতেছে তাদের প্রতি জনগণের ঘৃণার যে স্তূপ জমা হয়েছে তা যদি তারা দেখতো তবে লজ্জাতে গ্রহ থেকে পালিয়ে যেত। যে জুনিয়র কলিগ আপনার সামনে নত হয়ে হুজুর হুজুর করেছে সে কলিগ যদি আপনার ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর একবার খোঁজ না নেয় তবে এই চাকরি, এই ক্ষমতা মূল্যহীন। সারাজীবন ভুল পথেই তরী বেয়েছেন। যত ক্ষমতাধর হই না কেন, আমাদেরকে আবার ক্ষমতাহীন হতে হবে। বয়স আমাদেরকে অবসরে পাঠাবে, শক্তি ক্ষমতাহীন করবে। কাজের মধ্যে থেকে এমন কিছু যাতে না করি যা আমাকে অবসরে লাঞ্ছিত করবে, চিরকাল মানুষের ঘৃণা-অভিশাপে আমাকে রাখবে। শেষ বয়সের অনুশোচনায় এমনভাবে প্রায়শ্চিত্তের প্রবণতা উপস্থিত না হোক যাতে মানসিক অস্থিরতায় কাবু করে ফেলে। জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করে! প্রতিদিনের কর্মের মূল্যায়ন যাতে প্রত্যেকদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগেই করি। একদিন ১০টি ভুল করলে সেটি ইচ্ছা থাকলে পরেরদিন শোধরানো যায় কিন্তু শেষজীবনে একবারে যদি সব ভুলের হিসাব করতে যাই তবে তা কোটি ছাড়াবে! তখন আর শোধরানোর সুযোগ থাকবে না। আত্ম কৈফিয়ত জাগ্রত না হলে শিক্ষিত হওয়ার মূল্য নাই। শুদ্ধাচার বাহির থেকে পুশ করানো যায় না। নৈতিকতা চর্চা করে নিজের বোধ-বিবেকের ভেতর থেকেই জাগ্রত করতে হবে। একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে দায়িত্বহীন কোনো কাজে নিজেকে না জড়ানোর প্রত্যয় থাকতে হবে। সেবা করার মানসিকতা রাখতে হবে। এই সমাজে, দেশে কারা ভালো মানুষ, কারা মন্দ কাজের সাথে জড়িয়েছে তা কিন্তু জানি! বেতনের সাথে ভোগের তুলনা করেই সেটা অনায়াসে বলতে পারি! কথা শুনে, আচরণ থেকেও অনেকটা আন্দাজ করতে পারি। একজন ভালো মানুষের জন্য যে-রকম শ্রদ্ধা, একজন মন্দ মানুষের জন্য ঠিক বিপরীত ঘৃণা। মানুষ আমাকে যখন মূল্যায়ন করবে তখন আমার জন্যও যেন একটু শ্রদ্ধা-সম্মান থাকে, তেমন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করা উচিত। আমি কে? কাজ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বেকার আবার কাজ হারাবার পরের সময়টাতেও বেকার। কাজের সময়টুকুতে নির্ধারিত হবে আমি আমার জন্য ঘৃণা রেখে যাচ্ছি নাকি ভালোবাসা কুড়িয়ে নিচ্ছি। রাস্তা দু’টো- হয় মরার সাথেই মরে যাবো নয়তো মৃত্যুর মাধ্যমে অমর হবো! আমাদেরও ভালোর প্রতি কিছু লোভ থাকুক। যেন কাজের মাধ্যমে কীর্তিমান হওয়ার চেষ্টা করি। আমার শূন্যস্থান যেন আমাকে সম্মানে স্মরণ রাখে। আমার অবর্তমানে কেউ বলুক, এই শূন্যস্থান পরিপূর্ণ হওয়ার নয়। ভালো কাজ করলে ভালোবাসা থাকবেই। মানুষেরা মনে রাখবেই। এই একজীবনে একটুখানি মানুষ হতে পারলে জীবন ধন্য হবে। সততার সৌন্দর্যে সুশীতল শোভায় সুঘ্রাণ ছড়াবে।

লেখক : রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW