প্রতিনিয়ত দেশে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহের কারণে অবলীলায় খুন হচ্ছে মানুষ। অবক্ষয়, অসহিষ্ণু মনোভাব, নির্মমতা, অমানবিকতা, নীতিহীনতা দিন দিন আমাদের সমাজে যেভাবে চেপে বসছে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে খুনখারাবি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, রাহাজানি, লুটতরাজের মতো ঘটনা। ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আসলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধান নিয়ে দেশের জনগণ সংশয়ে আছেন। কেননা স্পষ্টত লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই আতঙ্কে আছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা তো পরিকল্পিত ও নিয়মমাফিক ছিল না। তারা তাদের মতো করে এইসব কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, দখল, চাঁদাবাজিসহ তুচ্ছ কারণে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন স্বৈরাচার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নিলে সারা দেশে ব্যাপক সংঘাতের ঘটনা ঘটে। বহু থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং কয়েকটি কারাগারেও হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারীরা প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে। এর মধ্যে কিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও আরো অনেক অস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের কাছে রয়ে গেছে। তারা খুন, ডাকাতি, লুটতরাজে এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জননিরাপত্তা এখনও পরিপূর্ণভাবে দেশে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এর পেছনে নানা কারণও বিদ্যমান তা অনেকের অভিমত। একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আমলে রাখতে হবে, ‘জনবিড়ম্বনা এবং সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে পরিস্থিতি বৈরিতার গ-িতেই থেকে যায়।’ দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রত্যেক স্তর থেকে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা আমরা চাই না। তাই এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পিটিয়ে মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। বিগত দেড় যুগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছিল একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের আখড়ায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের ফলে সেই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত হলেও নতুন দুর্বৃত্তরা যে শূন্যস্থান পূরণে থাবা বিস্তারের চেষ্টা করছে। তাই জননিরাপত্তার দিকে সরকারকে অধিক নজর দিতে হবে।