আশাশুনি দুর্নীতির প্রতিবাদে কমিটির ৫ সদস্যের পদত্যাগ

এফএনএস (জি.এম. মুজিবুর রহমান; আশাশুনি, সাতক্ষীরা) : : | প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত আশাশুনি উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠনে সমবায় আইন অমান্য করা, সরকারি কর্মকর্তা কো-অপট না করা, মৃত্যুজনিত শূন্যপদে সদস্য কো-অপট না করা, অবৈধ ভাবে সম্মানী ভাতা গ্রহন করা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে চেক-এ জাল স্বাক্ষর করার মিথ্যা অভিযোগ আনাসহ চক্রান্ত, দুর্নীতি, প্রতারনা ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে এনে কার্যকরী কমিটি থেকে ৫ সদস্য একযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

ইউসিসিএ লিঃ আশাশুনি উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির কার্যকরী কমিটির নির্বাচন ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বুদ্ধদেব সরকার, শৈলেন্দ্র নাথ মন্ডল ও মনিরুজ্জামান সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৯৭টি ভোটের মধ্যে ৪৪ ভোট পেয়ে মনিরুজ্জামান নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহ সভাপতি পদে দিপক কুমার, সদস্য পদে ৬টি ব্লক থেকে ৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। সমবায় আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ৬০ দিনের মধ্যে ৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে কমিটিতে কোঅপট করতে হয়। কিন্তু প্রায় দু'বছরের কোন সরকারি কর্মকর্তাকে কোঅপট করা হয়নি। তাছাড়া কোন ব্লক হতে কোন কার্যকরী সদস্য মারা গেলে বা দেশ ত্যাগ করলে সমবায় আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে সেই ব্লক হতে  কোন সমবায়ীকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোঅপট করতে হয়। কিন্তু বিগত দুই বছরে কোন মিটিংএ কোন সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। আবার সদস্য মৃত্যুর ৬ মাস পরে কার্যকরী কমিটির পূর্বের কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই কমিটির সভাপতি মোবাইলের মাধ্যমে বিল্লাল হোসেন নামে একজনকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে মিটিং পরিচালনা করেন। কিন্তু তারপর থেকে কোন সভায় তাকে সদস্য হিসাবে কোঅপট করা হয়নি। নির্বাচনের পর থেকে অদ্যাবধি সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। সমবায় আইন অনুযায়ী অবৈধ সদস্য বিল্লাল হোসেনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত মিটিং এর সম্মানী দেওয়া বৈধ ছিলনা। প্রত্যেক মিটিংয়ে সদস্যদের অর্ধেকাংশ সদস্যের উপস্থিত থাকা এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ২ জনের উপস্থিতি না থাকলে কোরাম পূর্ণ হয়না। ফলে সমবায় আইন লংঘনের কারনে কমিটি যেমন অবৈধ হয়েগেছে, তেমনি সভাপতি একক স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা করে যে সম্মানী ভাতা এবং বিভিন্ন সমিতিতে ভ্রমন দেখিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ভ্রমন ভাতা গ্রহন করেছেন তা অবৈধ ও ফেরৎ যোগ্য বলে জানাগেছে। এছাড়া তিনি এআরডিও মোস্তাফিজুরের কু পরামর্শে ৩০ জুনের মত ঋণ কার্যক্রমের শেষ দিবস গত ৩০ জুন অফিসে না গিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন এবং অন্যান্য সময়ের ন্যায় সভাপতি তার স্বাক্ষরকৃত ব্লাঙ্ক চেক রেখে যাওয়ায় জুনিয়র হিসাব অফিসার সঞ্জয় কুমার দত্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচিত ৩টি সমিতিকে ঋণের চেক প্রস্তুত করেন। কিন্তু সভাপতি পূর্ব পরিকল্পনা মত এরআরডিও'র সাথে যোগসাজসে চেকে তার স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করেন। তখন তারা চেক ৩টি বাতিল করে অস্বাক্ষরিত চেকে টাকা বসিয়ে চেয়ারম্যানের অপেক্ষায় থাকেন। দীর্ঘ অপেক্ষার মোস্তাফিজুর তার কাছে গিয়ে চেক স্বাক্ষর করিয়ে এনে টাকা বিতরন করেন। অথচ পরের দিন ১/৭/২৪ তাং ঢাকায় গিয়ে আবু বিল্লাল হোসেনের নামে চেকের স্বাক্ষর জাল করার মিথ্যা অভিযোগসহ ৯টি অভিযোগ দায়ের করেন। অথচ ব্লাঙ্ক চেকগুলো এখনো অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া সভাপতি এআরডিওকে ব্যক্তি প্রাধান্য দিয়ে তার দ্বারা নতুন নতুন সমিতি করে তারা দুজনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্য  করেছেন। এবং সরকারের সাথে প্রতারনা করে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সাথে মিথ্যা কথা বলে গত ৪/৬/২৪ তাং ৭নং অধিবেশনে ৫টি সমিতির নামে ভূয়া নিবন্ধন দেখিয়ে সোনালী ব্যাংকে এপিএলপি-০৭ দাখিল করেন। অবৈধ সভাপতি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সরকারি ট্রেজারী ফাঁকি দিয়ে দুজনে মিলে বিভিন্ন ভাউচারে নিজের স্বাক্ষরকে অস্বীকার করে একের পর এক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চাপে রেখে ঘুষ বাণিজ্য করেই চলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এআরডিও'র সাথে ষড়যন্ত্র করে বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মহা পরিচারকের কাছে হয়রানিমূলক ভাবে মিথ্যা অভিযোগ করেন এবং অভিযোগ করা ভুল হয়েছে স্বীকার করে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য স্বাক্ষীদের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা গ্রহন করেও এখনো করেননি। 

সভাপতি ও এআরডিও এর একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারনা ও ঘুষ বাণিজ্যতে অতিষ্ঠ হয়ে কার্যকরী কমিটির সদস্য সিদ্ধার্থ গাইন, কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, আব্দুল মালেক গাজী ও মনিষ কুমার মন্ডল স্বেচ্ছায় একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া বিআরডিবি আশাশুনি উপজেলা দপ্তরের হিসাব সহকারী, পরিদর্শক, অফিস সহকারী, গ্রাম সংগঠক, মাঠ সহকারী, নৈশ প্রহরী ও এমএলএসএসবৃন্দ প্রকিষ্ঠানে একের পর এক দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পৃথক একটি আবেদন করেছেন। 

এব্যাপারে অভিযুক্ত ইউসিসিএ লিঃ এর সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। তবে অভিযোগে লিখিত ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে ঢাকায় পৌছে আমার ভুলবশত দায়ের করা অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য উক্ত টাকা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও অভিযোগ প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে পারিনি। কমিটির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথাটি এড়িয়ে গিয়ে নামাজে যাবেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW