তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানি আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রোববার (৩ মার্চ) এই শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য এই দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। অপরদিকে, আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে, গত ১৯ জানুয়ারি আবেদনকারীদের সময় প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছিল। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি আবেদনগুলো কার্যতালিকায় ওঠে এবং তার ধারাবাহিকতায় আজ এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
পটভূমি: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের চাপে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করে। পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি এই সংশোধনীতে অনুমোদন দেন। ফলে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক রিভিউ আবেদন করেন।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট: গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে এবং তা বাতিলের রায় দেন। ওই রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের সুপারিশ করা হয়।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য শুনানিতে এই চারটি রিভিউ আবেদন একসঙ্গে উপস্থাপিত হবে এবং আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। এই রায়ের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।