নির্বাচনে কারসাজি আখেরে ক্ষতিকর: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম
নির্বাচনে কারসাজি আখেরে ক্ষতিকর: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন

জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, "ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভোট সন্ত্রাসের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে জয়ী হওয়া যায়, কিন্তু আখেরে তা দেশ, দল ও ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য।" তিনি ভোটে কারসাজি না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।  

রোববার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সিইসি বলেন, "আমরা ১৮ কোটি মানুষের পাশে আছি। আমাদের লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা জাতির কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়নে কাজ করছি। আপনাদের সহযোগিতা চাই, কারণ আমরা আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।"  

তিনি আরও বলেন, "বাঙালি এখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। যদি আমরা কোনোভাবে পিছলে যাই, তাহলে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। ভোট এখন শুধু অধিকার নয়, এটি নাগরিকের দায়িত্বও। আমরা দিনরাত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে এবং আমরা তা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"  

সিইসি বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দেবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। প্রতিটি দলের আলাদা পারসপেকটিভ ও স্বার্থ আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত সব দল একমত হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করবে।"  

তিনি আরও উল্লেখ করেন, "সকল রাজনৈতিক দলই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আমরা যদি দলগুলোর কাছ থেকে লিখিতভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারি, তাহলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হবে। এটি দলগুলোর ওপর চাপ তৈরি করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে।"  

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য খোলা মাঠে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, "আমি চাই, আমাদের নির্বাচনটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়। বদ্ধ ঘরের পরিবর্তে স্কুলের খোলা মাঠে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করবে।" তবে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।  

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ লাখ মৃতভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার।  

জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করেছে। ঢাকায় সকালে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিইসি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।  

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, "আমরা একটি কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। আমাদের ভাঙতে হবে, কিন্তু মচকানো যাবে না। একটি ভালো নির্বাচন আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিকভাবে বিশ্বাস অর্জন ও সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।"  

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, "জনগণের অংশগ্রহণই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মূল চাবিকাঠি। ভোটাররা যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে পারেন, তাহলেই তাদের মতামত প্রতিফলিত হবে।"  

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে