ফিরে দেখা ৬মার্চ ২০০৬

আজকের এই দিনেই মুক্তাগাছায় গ্রেফতার হয় জঙ্গিনেতা বাংলা ভাই

এফএনএস (মোঃ ফেরদৌস; মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
আজকের এই দিনেই মুক্তাগাছায় গ্রেফতার হয় জঙ্গিনেতা বাংলা ভাই

আজকের এই দিনেই গ্রেফতার হয় জঙ্গিনেতা বাংলাভাই। পতন ঘটে জঙ্গি উত্থানের। মুক্তাগাছার দূর্গম পল্লীর রামপুর গ্রামের মানুষের মন থেকে এখনও জঙ্গি আতঙ্ক কাটেনি। জানা গেছে, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার দুল্লা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের নেওয়াজ আলীর ছেলে চান মিয়ার বাড়ী থেকে ২০০৬ সালের ৬ মার্চ রক্তাক্ত অবস্থায় গ্রেফতার হয় জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই।একই সঙ্গে গ্রেফতার হয় তার সহযোগী জঙ্গি মাসুম। তার আগে ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া রামকৃষ্ণ মিশন রোডের একটি বাসা থেকে আটক করা হয় তার স্ত্রী ফাহিমা, ১৮ মাসের শিশুপুত্র সাদ বিন সিদ্দিক ও জেএমবির এহসার সদস্য ইয়াজকে। ফাহিমার স্বীকারোক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান কর্নেল গুলজার আহমদের নেতৃত্বে একটি টিম ২ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে বাংলাভাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। মূলত বাংলাভাইয়ের গ্রেফতারের মধ্যে দিয়েই তছনছ হয়ে যায় জেএমবির নেটওয়ার্ক। বাংলাভাই গ্রেফতারের পর অবহেলিত গ্রাম রামপুরকে নিয়ে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সচেতন মানুষের নজর ছিল এ গ্রামের দিকে। জঙ্গিরা কোথায় থেকে কিভাবে আসত-যেত, কোথায় চলত টেনিং, এ অঞ্চরে কী পরিমান জঙ্গি রয়েছে তা নিয়ে চলত হিসাব-নিকাশ। ক্রমশ বেরিয়ে আসতে শুরু করল নানা চমকপ্রদ অজানা তথ্য। জানা গেছে ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সারাদেশে ৬৩ জেলায় বোমা হামলার মূল পরিকল্পনা হয় একই বছরের জুন মাসে মুক্তাগাছার আরেক অবহেলিত গ্রাম সৈয়দ গ্রামের শরিফের বাড়িতে। মুক্তাগাছা ও জামালপুর জেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের ঘোড়াধাপ, হরিনাতলা, চিথলিয়া গ্রামকে ঘিরেই দেশে প্রথম জঙ্গি ঘাঁটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৯৮ সালে। সেখানে দূর্গম এলাকায় চলত ট্রেনিং ও দাওয়াতের কাজ। এ অঞ্চলে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে যোগ দেয় সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই। জানা যায় গ্রেফতারের বছর দুয়েক আগে রামপুরের পার্শ্ববর্তী ইছাখালী বাজারে স্থানীয় নাট্যকর্মীরা নাটক করতে চাইলেও জঙ্গিরা বোমা মেরে পুরোগ্রাম উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। যে কারণে ওই সময় আর নাটক মঞ্চস্থ করতে পারেনি। রামপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকা চন্ডিমন্ডপ, গয়েশপুর, রামাকানা, বদ্রেরবাইদ, নালীখালী, শোলাকুড়ি, গোলাবাড়ী, চতল ও চিথলিয়ার বিভিন্ন স্পটে জঙ্গি বাহিনীর ছিল অবাধে বিচরন। কমান্ডো স্টাইলে নিঝুম অন্ধকারে চলত ট্রেনিং। তখনো কেউ জানতে পারেনি এরা কারা ? একপর্যায়ে ওই এলাকাগুলো হয়ে উঠে জেএমবির নিরাপদ ঘাঁটি। জানা যায়, ৬ মার্চ ভোররাতে কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহম্মেদ নিভৃত পল্লীর রামপুরে একদল সাহসী অফিসার ও সৈনিক নিয়ে নেওয়াজ আলীর ছেলে চান মিয়ার টিনশেড বাড়ির চারপাশে ঘিরে ফেলেন। তারপর চালানো হয় অপারেশন। মাত্র ২ ঘন্টার শ্বাসরূদ্ধকর অপারেশনে বাংলাভাই লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় ভ্যানযোগে এনে ময়মনসিংহ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। স্যাটেলাইট চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। দ্রুত দেশব্যাপী প্রচার পায় জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে গ্রেফতারের খবর। যে বাংলাভাইকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় গ্রেফতারের জন্য চারদলীয় জোট সরকার ঘোষনা করেছিল ৫০ লাখ টাকা, সে বাংলাভাইকে নিয়ে গোটা বাংলাদেশ ছিল আতঙ্কিত, সেই বাংলাভাইকে জীবিত গ্রেফতারের খবরে গোটা জাতি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

২০০৭ সালের ২৯ মার্চ জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান মোস্ট ওয়ান্টেড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ অপরাপর ৬ জেএমবির ফাঁসি কার্যকর হয় দেশের বিভিন্ন জেলখানায়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে