সুনদরবনে ফের সক্রিয় ১৫ দস্যু বাহিনী

এফএনএস (কে, এম, আজগর হোসেন ছাব্বির: দাকোপ, খুলনা) : | প্রকাশ: ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
সুনদরবনে ফের সক্রিয় ১৫ দস্যু বাহিনী

সুন্দরবনে ফের দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৫ বনদস্যু বাহিনী। বনজীবিদের জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে প্রশাসনের কঠোর অভিযান ও নজরদারীর দাবী উঠেছে।

সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবি এবং দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে ফিরে আসা একাধীক জেলে বাওয়ালী সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগ মিলে বর্তমানে ১৫ টি দস্যুবাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা বনাঞ্চল। পশ্চিম বনবিভাগের অধীন নলিয়ান রেঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে ৬টি বনদস্যু বাহিনী। বনদস্যুদের মধ্যে অধিকাংশরা ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্নসমার্পন করে। ধারাবাহিক আত্নসমর্পনে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে তারা নতুন করে অস্ত্র ও জনবল নিয়ে সংগঠিত হয়ে ফিরে এসেছে দস্যুতাবৃত্তির পুরানো পেশায়। এদের মধ্যে শরীফ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৪ জন। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাসিন্দা করিম শরীফ এই বাহিনীর প্রধান হিসাবে কাজ করছে। এদের কাছে আছে কাটা রাইফেল, দেশী বন্দুক ও পাইপগান। সুন্দরবনের কালাবগী, হাডডোরা হয়ে আদাচাই এলাকা নিয়ন্ত্রনে রেখে তারা মুক্তিপন ও চাঁদাবাজি করছে বলে জানা গেছে। এক সময়ের আলোচীত রাজু বাহিনীর সদস্য মজনুর নেতৃত্বে গঠিত মজনু বাহিনীর দলে আছে ১৬ জন। যাদের কাছে আছে দেশীয় বন্দুক ও পাইপগান। তারা সুন্দরবনের আদাচাই হতে শিপসার গোড়া, নিশানখালী ও চালোবাকি এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে। রবিউল বাহিনীতে আছে ১৫/১৬ জন। বাহিনী প্রধান রবিউলের বাড়ী খুলনার কয়রা উপজেলায়। তাদের কাছে আছে দেশীয় বন্দুক, পাইপগান ও দা। বনের মার্কি হয়ে পাতকোষ্টার মূখ পর্যন্ত এলাকা এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। জাহাঙ্গীর বাহিনীতে আছে ১১/১২ জন সদস্য। তাদের কাছে আছে দেশীয় তৈরী বন্দুক ও পাইপগান। আদাচাই, হাডডোরা এলাকা এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। ভাই ভাই বাহিনীতে আছে ৮ জন সক্রিয় সদস্য। এদের কাছে আছে দেশীয় বন্দুক ও পাইপগান। বনের শিপসার পশ্চিম পার এলাকা এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। এ ছাড়া মামা-ভাগ্নে বাহিনীতে আছে ১২ জন সক্রিয় সদস্য। তাদের কাছে আছে দেশী বন্দুক পাইপগান ও দা কুড়াল। শিপসার পশ্চিম পারের একটি অংশ তার নিয়ন্ত্রনে মুক্তিপন আদায় ও চাঁদাবাজি করছে বলে জানা যায়। সুন্দরবনে যাওয়া মাছ ও কাকড়া মারা জেলেদের কাছ থেকে মৌসুম চুক্তি হিসাবে নৌকা প্রতি আদায় করছে সাড়ে ২২ হাজার টাকা। গোন চুক্তি প্রতিটি নৌকা থেকে আদায় করা হয় ১ হাজার টাকা। জেলেদের এই টাকা লেনদেন হয়ে থাকে মৎস্য ডিপো মালিকদের মাধ্যমে। চলতি গোলপাতা আহরন মৌসুমে নৌকা প্রতি ৫ হাজার টাকা করে একাধীক বাহিনীকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর এই গোলপাতার নৌকার টাকা আদায় করা হয় সংশ্লিষ্ট বহর মালিকদের মাধ্যমে। উল্লেখিত হারে ধার্য্যকৃত চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জেলে বাওয়ালী ও মৌয়ালদের তুলে নিয়ে করা হয় বেপরোয়া মারপিট ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। সম্প্রতি দাকোপের নলিয়ান এলাকা হতে জনৈক ডিপো মালিকের ২ জেলেকে তুলে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক ভুক্তভোগী পরিবার জানায়। অপরদিকে কোষ্টগার্ডের হাতে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া বনদস্যু আছাফুর জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে এসেছে। তাকে গ্রেফতারে সহায়তা করেছে এমন অভিযোগে আছাফুর সুতারখালীর বিভিন্ন জনের বাড়ী গিয়ে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। বনদস্যুদের এমন অত্যাচার নির্যাতন ও মুক্তিপন আদায়ে অতিষ্ঠ বনজীবিরা পেশা পরিবর্তনের পথে হাটছে। ফলে সরকার হারাতে যাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনে জরুরী ভিত্তিতে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে আইনশৃংক্ষলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবী। একই সাথে ধারাবাহিক নজরদারীতে রাখতে নিয়মিত টহল জোরদার করা প্রয়োজন এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে