বিশ্ববাণিজ্যে নাটকীয় মোড়: চীন বাদে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
বিশ্ববাণিজ্যে নাটকীয় মোড়: চীন বাদে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

বিশ্ববাণিজ্যে টানাপোড়েনের এক সংকটময় সময়ে হঠাৎ করেই আমদানি শুল্ক নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৯ এপ্রিল) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি জানান, চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই সময়েও এসব দেশের পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে।

চীনের ক্ষেত্রে উল্টোভাবে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, “বিশ্ববাজারের প্রতি চীনের অসম্মানজনক আচরণের জবাবেই এ পদক্ষেপ।”

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইউএসটিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প বলেন, “যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৎ ও সুষম বাণিজ্য করতে চায়, তাদের আমরা স্বাগত জানাই। শুল্ক বিরতির এই ৯০ দিন আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার সময় দেবে।”

এই ঘোষণার পরপরই হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তিনি বলেন, “এটি কোনো বাণিজ্যযুদ্ধ নয়, বরং আলোচনার পথ প্রশস্ত করার উদ্যোগ। যেসব দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, তারা পুরস্কৃত হবে।”

এই ঘোষণায় বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ সাময়িক স্বস্তি পেয়েছে। গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক অন্তত সাময়িকভাবে স্থগিত করতে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সেই অনুরোধের প্রতিফলন দেখা গেছে।

এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক ইউনূস ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, “৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় কৃতজ্ঞ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে প্রস্তুত।”

যদিও চীন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে ‘নিপীড়নমূলক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তবে বাকি বিশ্বে ট্রাম্পের ঘোষণা বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলেছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে এই ঘোষণার পরপরই শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। এশিয়া ও ইউরোপের স্টক মার্কেটে বড় ধরনের পতন হলেও ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে ইতিবাচক ঢেউ দেখা যায়। ডাও জোন্স বেড়ে যায় প্রায় ২,৫০০ পয়েন্ট, নাসডাক ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ বেড়ে পৌঁছে ৫,২৮১ পয়েন্টে।

তেলের বাজারেও দেখা যায় স্থিতিশীলতা। সাময়িক দরপতনের পর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আবার বাড়তে শুরু করে। ডলারের দরও কিছুটা উর্ধ্বমুখী হয়।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে “অন্তরের কথা শুনে” নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি কোনও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলিনি। শুধু বাজারের প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্ব নেতৃত্বের বার্তা আমলে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত।”

বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, ট্রাম্প যখন এই ঘোষণা লিখছিলেন, তিনি এবং অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট তাঁর পাশে ছিলেন। লুটনিক বলেন, “এটি তাঁর প্রেসিডেন্সির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।”

অর্থমন্ত্রী বেসেন্টও বলেছেন, “শুধু বাজার নয়, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ তৈরিই ছিল এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য।”

যুক্তরাষ্ট্রের ২৬ শতাংশ শুল্কের কবলে পড়া ভারতও এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে