স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেগ গাড়িচালক মালেক ও তার স্ত্রীর কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:২৪ পিএম
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেগ গাড়িচালক মালেক ও তার স্ত্রীর কারাদণ্ড

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক আব্দুল মালেকের দুর্নীতির কাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া এই প্রাক্তন গাড়িচালক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় অবশেষে আদালত রায় ঘোষণা করেছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন মালেককে পাঁচ বছর এবং তার স্ত্রীকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেইসঙ্গে উভয়কে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের এক কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় মালেককে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিনে থাকা নার্গিস বেগম স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শেষে দুজনকেই সাজা পরোয়ানা অনুযায়ী কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ১১ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০২২ সালের ১১ মে বিচার শুরু হয় এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এই রায় ঘোষণা করে।

এই মামলায় ১০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যারা সকলেই মালেক দম্পতির অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণে ভূমিকা রাখেন।

এর আগেও দুর্নীতির দায়ে মালেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ মার্চ অবৈধভাবে দেড় কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের আরেক মামলায় তাকে পৃথক দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় মালেককে দুই ধারায় সর্বমোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মালেকের অবৈধ সম্পদের তালিকা যেন বিলাসী জীবনের প্রতিচ্ছবি। র‍্যাবের অভিযানে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে উঠে আসে—ঢাকার তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা ভবন, বিশাল ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে চার কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন, কলাবাগানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৫টির বেশি ফ্ল্যাট। ব্যাংক হিসাবেও জমা ছিল মোটা অঙ্কের অর্থ।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের অভিযানে মালেক গ্রেপ্তার হন। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, জাল টাকা, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সেই থেকেই শুরু হয় একের পর এক দুর্নীতির বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ।

দুদক জানিয়েছিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। মালেক ছিলেন সেই তালিকার একজন। এ থেকে বোঝা যায়, পুরো ব্যবস্থাপনাতেই দুর্নীতির জাল বিস্তৃত ছিল।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে