বিদেশ সফরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য কড়া নির্দেশনা জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা তার স্বামী, স্ত্রী কিংবা সন্তানকে সরকারি ভ্রমণের অংশ হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন না। একইসঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোনো ঠিকাদার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিদেশ ভ্রমণ।
গত ২৩ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার স্বাক্ষরিত পরিপত্রে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হলেও বিষয়টি সম্প্রতি জনসমক্ষে আসে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা।
পরিপত্রে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সরকারি সফরের স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা যেকোনো বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এছাড়া, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও সচিবদের একান্ত সচিব (পিএস) ও সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) সহযাত্রী হিসেবে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া যাবে না। সরকারিভাবে বিদেশ সফর নির্ধারিত উদ্দেশ্য ছাড়া কোনোভাবেই ‘পারিবারিক সফর’ বা ‘আরামযাত্রায়’ রূপ নিতে পারবে না বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে পরিপত্রে।
নিয়মিত ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে জারি করা এ নির্দেশনার উদ্দেশ্য—সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কার্যকর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার এমন সময় এ ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করল, যখন একদিকে বাজেট ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থারও সুপারিশ রয়েছে। তাছাড়া অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক কর্মকর্তার বিদেশ সফর প্রকল্প সংশ্লিষ্টতার বাইরে গিয়ে ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের’ বদলে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ পরিণত হয়েছে।
নতুন এ নির্দেশনা কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে দিকেই এখন নজর সবার। তবে এটি নিশ্চিত যে, সরকারি ভ্রমণকে দুর্নীতিমুক্ত ও অর্থবোধক করতে হলে এমন কড়াকড়ির বাস্তব প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।