খালেদা-জামায়াত বৈঠক: সৌজন্যের ছায়ায় রাজনীতির ইঙ্গিত?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
খালেদা-জামায়াত বৈঠক: সৌজন্যের ছায়ায় রাজনীতির ইঙ্গিত?

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ঘিরে রাজনীতির অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। তবে দলীয় প্রধান শফিকুর রহমানের ভাষায়, এটি ছিল মূলত একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ, যেখানে রাজনৈতিক বিষয় ছুঁয়ে গেলেও কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি কেউ।

গেলো ১৩ এপ্রিল লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। শফিকুর রহমান জানালেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুই অসুস্থ এক বর্ষীয়ান রাজনীতিকের খোঁজখবর নেওয়া। তবে, রাজনৈতিক আলোচনার অনুপস্থিতি ছিল না, যদিও তা ছিল অস্পষ্ট ও অনির্ধারিত।

শফিকুর রহমান বলেন, “দুই দলের শীর্ষ নেতারা এক জায়গায় বসে, আর রাজনীতির কোনো আলাপ হবে না—এটা কি বাস্তবসম্মত? বাস্তব নয়। আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে নয়।”

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনের সময়, পদ্ধতি কিংবা বিচার প্রক্রিয়া—এইসব বিষয়েই হয়েছে সাধারণ আলোচনা। তবে তা ছিল সিদ্ধান্তহীন।”

বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, জামায়াত আমির বিষয়টিকে 'বিরোধ' বলতে নারাজ। বরং তিনি এটি দেখছেন ‘স্বাস্থ্যকর মতপার্থক্য’ হিসেবে। “রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকা জরুরি,” বলেন তিনি, “কিন্তু সেটা যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। আমরা মিউচুয়াল রেসপেক্টের জায়গায় থাকতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমি আমার মতামত দিতে পারি, কিন্তু কাউকে বলার অধিকার নেই যে, ‘এটাই করতে হবে’। এই চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি নয়, গণতন্ত্রও নয়।”

আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ফের একসঙ্গে পথচলা কি শুরু হতে যাচ্ছে? প্রশ্ন উঠতেই ডা. শফিকুর রহমানের কূটনৈতিক জবাব, “দেশ ও জাতির স্বার্থ বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলো যেকোনো সময় উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারে।” তবে একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “কিছু দল স্পষ্ট করে বলেছে, তারা এখনই কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছে না। তাই অপেক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে সফরকালে জামায়াত প্রতিনিধিরা ব্রাসেলসে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন’ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি, জাতি এখনো ট্রমায় আছে। সরকার গত জুলাই-আগস্টে কার্যত গোটা জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আন্দোলন ছিল জনতার, একক কোনো দলের নয়।”

তিনি যোগ করেন, “আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে প্রকৃত নির্বাচন বানাতে পারেনি। তাদের নিজ সমর্থকরাও ভোট দিতে যায়নি। বাস্তবতা সবাইকে মানতে হবে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির জানান, “ম্যাডাম মানসিকভাবে কিছুটা ভালো আছেন। কারণ, দীর্ঘদিন পর তিনি আপনজনদের পাশে পেয়েছেন।”

তবে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময় নিয়ে কোনো স্পষ্ট আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। “তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হয়তো আগামী মাসে ফিরতে পারেন—আমাদের এমন অনুমান। তবে কোনো চূড়ান্ত কথা বলেননি।”

আগামী রোজার (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে পূর্বে মন্তব্য করলেও, পরে সেই অবস্থানে নমনীয়তা দেখান শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “এটা কোনো কোরআনের আয়াত নয়। বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে তারিখ এগোতেও পারে, পিছাতেও পারে। আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি, আরেকটু করতেও পারব।”

মির্জা ফখরুলের ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই’ বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ‘কাট অফ টাইম’ বলতে চাই না। এতে সিদ্ধান্ত অচল হয়ে পড়ে। নমনীয়তা রাখতে হবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে