বিচার ব্যবস্থার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা কমাতে দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি) সংস্কারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। টেলিফোন ও খুদে বার্তাসহ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে আদালত এখন থেকে সমন জারি করতে পারবে। একই সঙ্গে ভুয়া মামলার বিরুদ্ধে শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ব্রিটিশ আমলের সিভিল প্রসিডিউর কোডে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত, সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী করা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একটি প্রচলিত কথা রয়েছে—কাউকে বিপদে ফেলতে চাইলে তার বিরুদ্ধে জমি মামলা করে দাও, কারণ সেটি শেষ হতে তিন প্রজন্ম লেগে যাবে। আমরা চাই, এমন পরিস্থিতি বদলাক। বিচার যেন একটি প্রজন্মেই শেষ হয়। সে উদ্দেশ্যে এই সংস্কার।”
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—মামলার রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনে জারি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা। ফলে রায় বাস্তবায়নের জন্য আলাদা জারি মোকদ্দমা করার প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে মামলার সময়ক্ষেপণ ঠেকাতে সময় চাওয়ার ব্যাপারে নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে। কতবার সময় চাওয়া যাবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে বিধিমালায়।
বিচারকার্যকে যুগোপযোগী করতে এবারই প্রথমবারের মতো প্রযুক্তিনির্ভর সমন জারির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে আদালত চাইলে মোবাইল ফোন, খুদে বার্তা (এসএমএস), ই-মেইল বা অন্য যে কোনো আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে সমন জারি করতে পারবে।
এ ছাড়া ভুয়া মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। পূর্বে এই অপরাধে সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল ২০ হাজার টাকা; সংশোধনের পর তা বেড়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে বিচারপ্রক্রিয়ার গতিশীলতা বাড়বে, নাগরিকদের হয়রানি কমবে এবং বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।