জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শনিবারসকালে সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে বললেন,
“একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর জন্য চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। মৌলিক এবং গঠনমূলক সংস্কার করে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও বিচার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।”
নাহিদ ইসলাম আরও যোগ করে বলেন,
“জুলাই সনদ জাতির সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন। এটা আমাদের কমিটমেন্ট এবং তা রাখতে হবে। যাতে আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আসতে না পারে তার সব নিষ্ক্রিয়তা এবং রাস্তা আমরা বন্ধ করেই সামনের দিকে এগুতে পারি। এমন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান আমরা প্রত্যাশা করি।”
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে। যে দলের প্রধান শক্তি ও ভিত্তির জায়গাটা হচ্ছে এই দেশের তরুণেরা। সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য ছিল আমরা ফ্যাসিবাদের বিলোপ ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, সেরকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।”
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যেন ব্যর্থ না হয় সে আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন,
“আমরা ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের কথা বইয়ে পড়েছি, কিন্তু যে আকাঙ্ক্ষায় জনগণের রাস্তায় নেমে আসা সে আকাঙ্ক্ষাগুলো বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি, ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার ফলেই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তাই আমরা চাই, এবারের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়। জনগণের ভেতরে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এটা জাতির প্রতি আমাদের সবারই অঙ্গীকার। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান আজকে বৈঠকে বসার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসককে পলায়ন করতে বাধ্য করেছিল বাংলাদেশের জনগণ। হাজারো মানুষের শাহাদাত বরণ ও আহত হওয়ার বিনিময়েই আজকের এই প্রেক্ষাপট।”
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরও রয়েছেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ আরও দুজন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।