সারা দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে একাডেমিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে। ২৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে দেশব্যাপী সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে শান্তিপূর্ণ ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তালা ঝুলিয়ে কর্মসূচি শুরুর পর শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্লাস, পরীক্ষা বা একাডেমিক কার্যক্রম চলবে না।” কর্মসূচির অংশ হিসেবে তালা ঝুলেছে অধ্যক্ষের কক্ষে, একাডেমিক ভবনে এবং শ্রেণিকক্ষে। এর মধ্য দিয়ে তারা এক নতুন ধাপে পা রাখলো দীর্ঘদিনের দাবিকে ঘিরে চলমান আন্দোলনে।
আন্দোলনকারীরা জানান, দাবির ব্যাপারে সরকারকে প্রায় আট মাস সময় দেওয়া হয়েছে। গঠিত কমিটির সঙ্গে তিনবার বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনো সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা আর সময় দিতে পারছি না। এবার চাই কার্যকর ফল। এই আন্দোলন জনদুর্ভোগের জন্য নয়, বরং এটি একটি শান্তিপূর্ণ শাটডাউন।”
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির অন্যতম হলো:
• জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০% কোটা বাতিল।
• হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত পদোন্নতির রায় বাস্তবায়ন।
• ২০২১ সালে বিতর্কিতভাবে নিয়োগ পাওয়া ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল।
• কারিগরি শিক্ষায় অভিজ্ঞ না এমন জনবল নিয়োগ বন্ধ এবং উপযুক্ত পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
• ডিপ্লোমা পাস শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
• স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ ও একটি ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
এই আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে উঠেছে “ছয় দফা না, তাহলে মৃত্যু”—যা শিক্ষার্থীদের দৃঢ় মনোভাব ও সংহতির প্রতিফলন। আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমরা সহিংস নই, তবে অন্যায় মেনে নেওয়ার মতো দুর্বলও নই।”
সরকার একটি ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার প্রথম সভা ইতোমধ্যে ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে মূল দাবিগুলোকে পাশ কাটানোর চেষ্টা চলছে।
আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়বেন না জানিয়ে বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষার মানোন্নয়নের নামে চটকদার স্লোগান নয়, চাই বাস্তব সংস্কার। যে পলিটেকনিকে পড়াশোনা করে আমাদের ভবিষ্যত গড়ে উঠবে, সেখানে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অবহেলার কোনো জায়গা থাকতে পারে না।”